মিনাক্ষী দাসঃ উত্তর চব্বিশ পরগণাঃ উত্তর চব্বিশ পরগণার বারাসাতে ছেলেধরা সন্দেহে তিন জনকে গণপিটুনির ঘটনায় পুলিশ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করলো। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আগামীকাল ধৃতদের আদালতে হাজির করানো হবে। তবে গ্রেফতারীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বারাসাতের কাজিপাড়ায় এক জন বালককে কেউ বা কারা নৃশংস ভাবে খুন করেছিল। কিন্তু গুজব রটে যায়, ওই বালককে ধরে নিয়ে গিয়ে চোখ উপড়ে, কিডনি বার করে খুন করা হয়। এরপর ঝুলন্ত অবস্থায় বালকের দেহ উদ্ধার হতেই পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে ছেলেধরার বিষয়টি খারিজ করে দিয়ে বলেছিল, ‘‘ময়নাতদন্তে এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। ওই বালকের মৃত্যুর সাথে শিশু চুরি বা ছেলেধরার কোনো সম্পর্ক নেই।’’ তবু গুজব থামেনি। নেটমাধ্যমেও তা নিয়ে রীতিমতো চর্চা চলছে। এমনকি বারাসাতে বলে অন্য বিভিন্ন জায়গার ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
এই গুজবের জেরে আজ এলাকাবাসীরা মোল্লাপাড়ায় এক জন ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেন। অন্য দিকে, সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের সামনে এক মহিলা ও তার সঙ্গীকেও ছেলেধরা মনে করে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলেও পুলিশের সামনেই ওই দু’জনকে টেনে হিঁচড়ে মারধর করা হয়। ফলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। আর আক্রান্ত তিন জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিন বারাসাত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝারখারিয়া সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ‘‘বারাসাতে কোনো শিশুচুরির ঘটনাই ঘটেনি।
যে বালকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে, তাকে খুন করা হয়েছে। খুনের অভিযোগে এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ছেলেধরার সাথে সেই খুনের কোনোরকম সম্পর্ক নেই। এই বিষয়ে অযথা গুজব ছড়াবেন না বা গুজবে কান দেবেন না।’’ আর এই গুজব এবং অপপ্রচারের কারণেই তিন জন সন্দেহের বশে গণপিটুনির শিকার হলেন। আর এদিনের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ দুই এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে যারা গণপিটুনি দিয়েছেন, তাদের বেশ কয়েক জনকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করেছে। বাকিদের সন্ধান চলছে।