বাংলা জুড়ে ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ (Team of Indian Prime Time): সকলের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শূন্যপদে নিয়োগ সহ বিভিন্ন দাবীতে ডি ওয়াই এফ আই ও এস এফ আই সহ ৮ টি বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠন বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযান করে। রাজ্যের পুলিশ ছাত্র-যুবদের প্রতিহত করতে লাঠিচার্জ, জলকামান চালায়। পুলিশের এই নৃশংস অত্যাচারের প্রতিবাদে আজ রাজ্য বামফ্রন্ট ১২ ঘন্টার বনধের ডাক দেয়। কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জেলা জুড়েই সিপিআইএম ও কংগ্রেসের ডাকা ধর্মঘটের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে।
হাওড়াতেও বেশ কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। আজ সকালে হাওড়া-আমতা, হাওড়া-ডোমজুড়ে লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বনধ সমর্থকরা ডোমজুড় বাসস্ট্যান্ডেও বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা সেখানে যথারীতি ফুটবল খেলতে থাক। একইরকম চিত্র হাওড়া-আমতা রোডের শানপুরে দেখা যায়। অবশ্য পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে বল কেড়ে নেয়। এদিন হাওড়ার সাঁতরাগাছির কোনা এক্সপ্রেসওয়েতেও বনধ সমর্থকরা অবরোধ করেন। এর পাশাপাশি রানিহাটিতে ষোলো নম্বর জাতীয় সড়কে বাম সমর্থকরা অবরোধ করেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে অভিযোগ পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বামেদের বনধে কংগ্রেস সমর্থন করলেও তাদের সেভাবে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। কিন্তু হাওড়ার শ্যামপুরে দ্যাওরায় কংগ্রেস সমর্থকরা পথ অবরোধ করেন। বাগনানের গদিতেও বাম কর্মী সমর্থকরা রাস্তা অবরোধ করে।
সকাল থেকেই সিপিআইএমের ডাকা বনধ সফল করার জন্য সিপিআইএম কর্মী-সমর্থকরা বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর রসিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে দলীয় পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করল। কোনো সরকারী বেসরকারী বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।
১২ ঘন্টার বনধে মিশ্র সাড়া পড়ল মালদা জেলায়। আজ সকাল থেকেই এখানে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে কোনো বেসরকারী বাস নজরে আসেনি। এদিকে ধর্মঘট সফল করতে সকাল থেকেই বামেরা শহরের রাজপথে মিছিল করে।জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব শহরের রথবাড়ি, ফোয়ারা মোড় সহ বিভিন্ন রাজপথে বনধের সমর্থনে মিছিলে হাঁটেন। বনধ সফল করতে কিছুক্ষণের জন্য রথবাড়ি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরুদ্ধ করা হয়। যদিও পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই বিষয়ে বামফ্রন্টের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র জানান, “বৃহস্পতিবার নবান্ন অভিযানে তাদের কর্মীদের ওপর নির্মম ভাবে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বেশ কয়েকজন কর্মী গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে। এরই প্রতিবাদে আজ তারা রাজপথে”।
শিলিগুড়িতে এদিন সকাল থেকেই অন্যদিনের মতো যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল।সকাল থেকে অনেক মানুষকেই নিজের প্রয়োজনে রাস্তায় বেরোতে দেখতে পাওয়া যায়। বেশ কয়েক জায়গায় দোকানপাট খুললেও আবার বেশ কয়েক জায়গায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি বাসস্ট্যান্ডে সাঁইথিয়া বহরমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর সাথে কান্দি বাসস্ট্যান্ডে কয়েক ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করে টায়ারে আগুন জ্বালিয়েও বিক্ষোভ করা হয়। দু’একটি সরকারী বাস চললেও সমস্ত বেসরকারী যানবাহন পরিষেবা বন্ধ ছিল। দোকানপাট বা হাট বাজার সবই বন্ধ রয়েছে। জেলা সদর বহরমপুর শহরে সরকারী অফিস খোলা থাকলেও তাতে হাজিরা ছিল নগন্য। বামফন্টের ডাকা বনধকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস। কান্দি শহরে বাম-কংগ্রেসের যৌথ উদ্যোগে কান্দি বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সেখানে কান্দি বিধায়ক সফিউল আলম খান সহ বামফ্রন্ট নেতৃত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
একইভাবে জলপাইগুড়িতেও বাজার, দোকানপাট প্রায় বন্ধ ছিল। কম সংখ্যক সরকারী বাস চললেও রাস্তায় যাত্রী কম ছিল। অন্যদিকে বেসরকারী বাসও রাস্তায় দেখা যায়নি। সরকারী অফিসে-আদালতের সামনে বনধ সমর্থনকারীরা বিক্ষোভ দেখায়। জেলা বিচারক আদালতের সামনে আসতেই বাম-কংগ্রেস নেতা কর্মীরা গাড়ির সামনে বসে পড়েন। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিচারপতি আদালতে প্রবেশ করেন৷ অন্যদিকে দফায় দফায় চলছে বিক্ষোভ। কখনো আইনজীবীকে আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বাম-কংগ্রেসের নেতারা কখনো বা আদালতের কর্মীদের আটকে রেখেই বিক্ষোভ চলছে। যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এদিন আদালতের সামনে জেলা বামফ্রন্টের আহ্বান সলিল আচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা গোবিন্দ রায়, কংগ্রেস জেলা সভাপতি পিনাকি সেনগুপ্ত, কংগ্রেসের প্রাক্তন জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে অন্যান্য জেলার মতো নদীয়াতেও সমস্ত দোকানপাট বা হাটবাজার সহ বেসরকারী বাস বন্ধ ছিল। আর জেলা জুড়ে বনধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যথেষ্ট পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল।