চৈতন্যদেবের অন্যতম পীঠস্থান রামকেলিতে বন্ধ হয়ে গেল মেলা
দীপঙ্কর গোস্বামীঃ মালদাঃ করোনা সংক্রমণের জেরে গত বছরের পর চলতি বছরেও শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর পীঠস্থান রামকেলিতে মেলা বন্ধ। রামকেলি ধাম উত্তর পূর্ব ভারতের একমাত্র মাতৃ পিন্ডদানের জায়গা। মালদার ইংরেজবাজার ব্লকের মহদীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঐতিহাসিক নিদর্শন ক্ষেত্র গৌড় যাওয়ার পথে রামকেলি ধাম অবস্থিত। যেখানে মহাপ্রভুর পদ চিহ্ন আছে। শ্রী চৈতন্যদেবের এই পদ চিহ্নকে ঘিরে রামকেলি ধাম গড়ে উঠেছে। রামকেলিধামে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বিশাল একটি মূর্তির পাশাপাশি রাধাগোবিন্দ ও মদনমোহনের বিগ্রহ অবস্থান করে আছে।
রামকেলি ধামের মদনমোহন মন্দির কর্তৃপক্ষের কয়েকজন সদস্য জানিয়ে দিয়েছেন, “আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে ১৫ ই জুন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু রামকেলিতে পদার্পণ করার পর থেকেই সেই দিনটিকে ধরেই রামকেলিতে উৎসব পালিত হয়ে থাকে”। কিন্তু মন্দির কর্তৃপক্ষ দেশ-বিদেশ থেকে আগত সাধুসন্তদের জমায়েত না করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং প্রচার শুরু করেছে। আর প্রশাসনও সব রকম জমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
১৫ ই জুন থেকে রামকেলি ধামে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, রাধা গোবিন্দ ও মদনমোহনের বার্ষিক উৎসব শুরু হবে। সাতদিন ধরে পূজাপাঠ এবং উৎসব চললেও করোনা সংক্রমণ ও লকডাউন পরিস্থিতিতে মেলা বন্ধ থাকবে। এছাড়া মন্দির কর্তৃপক্ষ জানান, “শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, রাধাগোবিন্দ এবং মদনমোহনের বিগ্রহ ছোটোখাটো ভাবে পূজিত হবে”।
কথিত আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে ১৫ ই জুন শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু রামকেলিতে পদার্পণ করেছিলেন। এরপর দীর্ঘক্ষণ একটি কদম গাছের তলায় বিশ্রাম নিয়েছিলেন ও ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। সেই গাছকে ঘিরেই শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর বেদি তৈরী করা হয়েছে। আর মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের পদচিহ্নকে ঘিরে মন্দির তৈরী হয়েছে। শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু এখানে এসেই রূপ গোস্বামী এবং সনাতন গোস্বামীকে কৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছিলেন। রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামীর উদ্যোগে মদনমোহনের বিগ্রহের মন্দির গড়ে উঠেছিল। তারপর শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু এখান থেকেই সনাতন ধর্মের প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন।
তাছাড়া কথিত আছে যে শ্রীরামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাদেবী এই রামকেলি ধামে এসে মাতৃ পিন্ডদান করার পর থেকেই এইখানে বিশাল একটি জলাশয়ের ধারে বিভিন্ন দেবদেবীর মন্দির গড়ে উঠেছে। আর সেই জলাশয়কে কেন্দ্র করে মাতৃ পিন্ডদান করার প্রচলন রয়েছে।