হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা খারিজ করলো রাজ্যের কংগ্রেস সরকার

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কর্ণাটকঃ গত মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে কর্ণাটকের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়া জয়ী হয়ে  মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ঘোষণা করেন যে, ‘‘পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরার উপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আর কে, কোথায় কি পোশাক পরবেন, সেটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ।’’

গতকাল সিদ্দারামাইয়া মাইসুরুতে একটি কর্মসূচীতে গিয়ে জানান, ‘‘আর কোনো বাধা রইল না। এবার হিজাব পরে যেকোনো জায়গায় যাওয়া যেতে পারে।’’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি এখনো সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।


যদিও আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, রাজ্যের কংগ্রেস সরকার বিভিন্ন আইনী দিক খতিয়ে দেখেই পূর্বতন বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করেছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১ লা জানুয়ারী উদুপির একটি প্রি-ইউনিভার্সিটিতে কয়েক জন হিজাব পরিহিত পড়ুয়াকে ক্লাসে বসতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে।


কলেজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক রঘুপতি ভট্ট স্পষ্ট বলেন, ‘‘হিজাব পরিহিতরা শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।’’ এরপরই রাজ্য জুড়ে দ্রুত বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর হিজাবের পাল্টা হিসেবে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গেরুয়া উত্তরীয় পরে আন্দোলন শুরু করে।


তারপর কয়েকটি জায়গায় হিজাবের পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশের সাথেও একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কয়েকটি জেলায় ১৪৪ ধারাও জারি করা হয়। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ২৬ শে জানুয়ারী রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর এই বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে।

কমিটিতে ঘোষণা করা হয় যে, কমিটি নির্দিষ্ট সুপারিশ করার আগে অবধি ছাত্রীরা কেবলমাত্র ইউনিফর্ম পরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয় কিছুই পরার অনুমতি নেই। তৎকালীন বিজেপি সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উদুপির কয়েক জন ছাত্রী রাজ্যের হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন।

তারা আদালতকে বলেছেন, ‘‘হিজাব পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। কোনোভাবেই তা বাতিল করা যায় না। ১০ ই ফেব্রুয়ারী প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্তির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ অন্তর্বর্তী রায়ে জানিয়েছেন, ‘‘যত দিন না রায় ঘোষণা হচ্ছে, কোনো পড়ুয়া ধর্মীয় প্রতীকমূলক কোনো পরিধান পরে সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারবে না।’’

এরপর মার্চ মাসে রাজ্যের হাইকোর্ট মুসলিম ছাত্রীদের আবেদন খারিজ করে জানায়, ‘‘হিজাব পরা ইসলামে বাধ্যতামূলক ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যে পড়ে না।’’ ফলে আবেদনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু গত অক্টোবর মাসে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ খণ্ডিত রায় দেওয়ায় বর্তমানে মামলাটি শীর্ষ আদালতেরই উচ্চতর বেঞ্চে গিয়েছে।

তবে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় রাজ্যের বিজেপি সরকারের আমলে জারি করা ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব নিষিদ্ধ’ সংক্রান্ত নির্দেশ বহাল ছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সরকার সেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে দিল। যদিও গেরুয়া শিবিরের দাবী যে, ‘‘হিজাব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়বে।’’

 

DISCLAIMER: This channel does not promote any violent, Harmful or illegal activities. All content provided by this channel is meant for an educational purpose only.

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031