নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীর পাশে দাঁড়াচ্ছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ

Share

রাজ খানঃ বর্ধমানঃ ৭০ বছর বয়সে গোটা রাজ্যেই নজির গড়লেন বর্ধমানের বাবুরবাগ এলাকার বাসিন্দা শেখ রবিউল হক। চলতি করোনা মহামারীতে সাধারণ মানুষ যখন চারিদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে রীতিমতো কালোবাজারি ও দুর্নীতির ভুরি ভুরি অভিযোগে জেরবার সেই সময় এই ৭০ বছরের বৃদ্ধ নিজের জীবন বিপদের মুখে সঁপে দিয়েছেন। ইনি পেশায় একজন রিক্সা চালক।

https://www.youtube.com/watch?v=c0w_lVH3yzA


কিন্তু করোনা শেখ রবিউলকে শিক্ষা দিয়েছে। তাই সেই রিক্সাকে ভেঙে ভ্যান গড়ে তুলেছেন। তবে কেন এই সিদ্ধান্ত? শেখ রবিউল বলেছেন, “সদ্য পেরিয়ে আসা রমজান মাসে করোনায় মাকে হারিয়েছেন। চোখের সামনে গাড়ি ভাড়া নিয়ে কালোবাজারি দেখেছেন। মাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আর বাড়ি থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অর্ধেক কিলোমিটারও নয়। সেখানে অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ৫ হাজার টাকা দাবী করেন।


কিন্তু সেই অর্থ দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না থাকায় বাধ্য হয়ে একজন পরিচিত টোটো চালককে অনুরোধ করেন। সেই টোটোচালকও ৩ হাজার টাকা চান। তাও দিতে পারেননি। শেষে এক বন্ধু যিনি ভ্যানে করে কয়লা সরবরাহ করেন সেই ভ্যান ধুয়ে মুছে সেই ভ্যানে করেই মাকে নিয়ে হাসপাতালে যান। তবে ততক্ষণে অনেকটাই দেরী হয়ে যায়। আর মাকে ফিরে পাননি।

শুধু মা হারানোর যন্ত্রণাই নয়, প্রতিবেশীদের মধ্যেই দেখেছেন যে বৃদ্ধা মা করোনায় আক্রান্ত তাই ছেলে বউ মাকে ফেলে রেখে পালিয়ে গেছেন। অবশেষে সেই মা মারাও গেছেন। একের পর এক এই মৃত্যু যন্ত্রণা দেখতে দেখতে শেখ রবিউল নিজের কর্তব্য স্থির করে নেন। এরপরেই নিজের প্রিয় রিক্সাকে ভেঙে দিয়ে ভ্যান গড়ে তুলেছেন। পরিচিতদের কাছ থেকে একটা মাস্ক, গ্লাভস, পিপিই কিট এবং স্যানিটাইজার পেয়েছেন। এখন সকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যে ৭ টা অবধি বাবুরবাগ এলাকায় নার্স কোয়ার্টারের কাছে বকুলতলায় সেই ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। 


ভ্যানের গায়ে লিখেছেন পোষ্টার – ‘অসহায় করোনা ব্যক্তিদের জন্য হাসপাতাল পরিষেবা দেওয়া হবে’। তাতে ফোন নম্বর পর্যন্ত দেওয়া আছে। না, কোনো অর্থ নয়। একেবারে বিনামূল্যে এই পরিষেবা দিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত বর্ধমান শহর ও আশপাশের তিন জন রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন। ডাক পড়লেই রোগী আনতে ছুটে চলেন। 

শেখ রবিউল জানিয়েছেন, “বাড়িতে তার স্ত্রী এবং ১৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। আগে রিক্সা চালিয়ে যা রোজগার করতেন তাতে কোনোরকমে দুবেলা জুটতো। তবে করোনার এই মহামারী, এই মৃত্যু মিছিল, চোখের সামনে মাকে মারা যেতে দেখে আর পিছন ফিরে তাকাননি। এখন করোনা আবহে সব দিন নিজের পেটে ভাতের জোগাড় হয় না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা যা সাহায্য করেন সেই দিয়েই তিনজনের সংসার চলছে। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা”।

https://www.youtube.com/watch?v=NAEY5PsLifI

তবুও শেখ রবিউল নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে নার্স কোয়ার্টার মোড়ে দাঁড়িয়ে বলে দিয়েছেন, “অ্যাম্বুলেন্স চালকরা এই সময় ব্যবসা করছেন। টোটোচালকরা আজেবাজে ভাড়া চাইছে। এই সময় কি ব্যবসার সময়? যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে এই কাজই করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবেন”। 

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031