নিজস্ব সংবাদদাতাঃ হুগলীঃ হুগলীর বৈদ্যবাটীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁতিরবাগানে পুরোনো তিন তলা বাড়ি ভাঙার কাজের সময় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক জন শ্রমিকের। মৃত ২৮ বছর বয়সী বৈদ্যবাটীতেই রেললাইনের পশ্চিমপাড়ের একটি ঝুপড়ির বাসিন্দা বীরু মাঝি। সেখানে মা, স্ত্রী ও তিন জন নাবালক ছেলে-মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার পরে বীরুকে গুরুতর আহত অবস্থায় সহকর্মীরা শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করলে রাতেরবেলাই মারা যান। এরপর দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। শোকের পাশাপাশি পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হওয়ায় তার মৃত্যুতে সংসার কী ভাবে চলবে তা নিয়েও পরিবারে হতাশা তৈরী হয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপদের ঝুঁকি এড়াতে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই পরিণতি ঘটেছে। এই ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে। এই ঘটনার ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক নিজেরাই শ্রমিক লাগিয়ে বাড়ি ভাঙার কাজ করাচ্ছিলেন। তাই এক্ষেত্রে ওই নির্মাণকর্মীর নিরাপত্তার দায়িত্ব কার সেই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
অনেক সময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে বহু শ্রমিক কাজ করেন। আর ন্যূনতম নিরাপত্তা ছাড়াই কাজ করতে হয়। আবাসনের ক্ষেত্রে উঁচুতে কাজের সময়েও হেলমেট বা সেফটি বেল্ট না থাকার ফলে পুরসভা অথবা শ্রম দপ্তরের উচিত তাদের সচেতন করার ব্যবস্থা করা।
![- Sponsored -](https://indianprimetime.in/wp-content/uploads/2021/02/advertisehere.png)
- Sponsored -
এলাকার পুর পারিষদ (পূর্ত) সুবীর ঘোষ জানান, ‘‘পুরসভায় কেউ বাড়ি ভাঙার আবেদন করলে অনুমতি দেওয়া হয়। কিছু ঘটলে জমির মালিক কিংবা যিনি কাজটি করছেন, তার উপরেই দায় বর্তায়।’’ পুরপ্রধান পিন্টু মাহাতো বলেন, ‘‘বাড়িটি ভাঙার জন্য পুরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি। স্থানীয় কাউন্সিলরকে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে। এরপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
বাড়ির মালিক অজয় মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি নিয়ে বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। যারা ওই কাজ করেন, তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য দড়ি এবং বেল্ট ব্যবহার করেন। কয়েক দিন তারা না আসায় কিছু স্থানীয় শ্রমিককে ছাদ থেকে জিনিসপত্র নামানোর কাজে লাগানো হয়েছিল। এতেই বিপত্তি হয়। ওই শ্রমিকের পরিবারকে যথাসাধ্য আর্থিক সহযোগীতার কথা জানিয়েছি।’’
শ্রম দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নির্মাণকর্মীরা নানারকম সুবিধা পান। শ্রমিকের মৃত্যু হলে পরিবার ক্ষতিপূরণও পায়। কিন্তু বীরুর পরিবারের কোনো সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ সমিতির আইনি পরামর্শদাতা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘মোট ৬৪ ধরনের শ্রমিক নির্মাণকর্মী হিসেবে চিহ্নিত। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বিষয়ে বহু নির্মাণকর্মী জানেনই না। সবাই যাতে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হন সেই দায়িত্ব শ্রম দপ্তর সহ পুরসভার নেওয়া উচিত।’’