পৃথিবীর দিকে তীব্র বেগে আছড়ে পড়তে চলেছে সৌরঝড়

Share

নিউজ ডেস্কঃ জুলাই মাসেই ন্যাশনাল ওশিয়ানিক এন্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভয়ঙ্কর সৌরঝড় আছড়ে পড়ার সতর্কবার্তা দিয়েছিল। কিন্তু ওই ধাক্কা অল্পের উপর দিয়ে গেছে। তবে বিপদ কাটেনি। সূর্যে নাকি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হচ্ছে। সূর্যের করোনায় ভয়ঙ্কর ঝড় উঠেছে। আর সেই সৌরঝড় পৃথিবীর দিকে তেড়ে আসছে। এক নয় একাধিক জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন।

ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানিয়েছে, সূর্যের পরিমণ্ডলে একটি ছিদ্র লক্ষ্য করা গেছে। সেই ফাটল পথেই প্রবল বেগে সৌরবায়ু ছিটকে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসবে। আগামীকাল এই সৌরঝড়ের দাপট থাকবে। এমনকি ১৮ ই ডিসেম্বর অবধি প্রায় সাড়ে নয় কোটি মাইল দূরে ঝাঁকে ঝাঁকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসবে। এতে পৃথিবীর চারপাশে থাকা চৌম্বক ক্ষেত্র কেঁপে উঠবে। দুই মেরুতে মেরুজ্যোতি ঘনঘন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

এছাড়া পৃথিবীতে সূর্যের প্লাজমা থেকে আসা ‘করোনাল মাস ইজেকশান’ হামলা চালাতে পারে। বিজ্ঞানীরা জানান, ‘‘সানস্পট AR3514 থেকে সৌরকণারা ধেয়ে আসছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে G3 ক্লাসের সৌরঝলক বা সোলার ফ্লেয়ার ঢুকে পড়বে। আর পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সাথে সংঘাত হবে।’’

সৌরপদার্থবিজ্ঞানীরা বলেন, ‘‘আমাদের পৃথিবীর যেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে, সূর্যের তেমন অ্যাটমস্ফিয়ার আছে। সূর্যের পিঠ (সারফেস) ও তার উপরের স্তরকে সোলার করোনা বলে। সারফেসের গড় তাপমাত্রা ৫৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কোথাও ৫৮০০ ডিগ্রি আবার কোথাও ৫২০০ ডিগ্রি সেলসিয়ারের কাছাকাছি। করোনার তাপমাত্রা সেখানে প্রায় ২ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। কখনো তারও বেশী। সবসময় এই তাপমাত্রার তারতম্য হতে থাকে।

এই করোনা স্তর যেখানে শেষ হচ্ছে সেখান থেকেই সৌরঝড়ের জন্ম হয়। এই করোনা উচ্চতাপমাত্রার প্লাজমা আবরণে ঢাকা। এখান থেকেই তড়িদাহত কণার স্রোত বেরিয়ে এসে প্রচণ্ড গতিতে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে। একেই সৌরঝড় বলে। যা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকেও প্রভাবিত করে। সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রে বিশাল পরিমাণ শক্তি রয়েছে। মাঝে মাঝে সেখানে বিকট বিস্ফোরণ হয়।

সেই শক্তি বেরিয়ে আসে যাকে বলে ‘করোনাল মাস ইঞ্জেকশন।’ এর ফলেই প্রচণ্ড গতির সৌরকণা ও সৌরঝড় পৃথিবীর উপর দিয়েও বয়ে যায়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করে এই সৌরকণারা। কিন্তু বাধা দেয় পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র (ম্যাগনেটোস্ফিয়ার)। এটাই আমাদের গ্রহের সুরক্ষা কবচ। করোনা থেকে ধেয়ে আসা সৌরঝড়, সৌরকণারা আমাদের পৃথিবীতে ঢুকতে চাইলে তাদের সঙ্গে লড়াই করে এই চৌম্বকক্ষেত্র। ফলে সৌরকণারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ঢুকতে পারে না। দুই মেরুতে এর প্রভাব দেখা যায়, তাই সেখানে অরোরা বা মেরুজ্যোতি তৈরি হয়।

তবে এবার যে একাধিক জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম ছুটে আসছে পৃথিবীর দিকে তাতে পৃথিবীর রেডিও সিগন্যাল ও টেলি যোগাযোগে বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি এই সৌরঝড় শক্তি বাড়ায় তাহলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে। আর রেডিও যোগাযোগ, জিপিএস বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্যও দায়ী এই সৌরবায়ু, সৌরঝড় এবং সৌর বিকিরণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন যদি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের আস্তরণ না থাকত তাহলে স্যাটেলাইটের সাথে এই শক্তিশালী সৌরঝড়ের প্রভাবে সম্পর্ক ছিন্ন হত , অকেজো হয়ে যেত বিমানের সেন্সর, বদলে যেত আবহাওয়ার প্রকৃতি।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram