অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ বৃহস্পতিবার থেকে সল্টলেকে এসএসসি ভবনের সামনে চাকরীহারাদের তিন জন প্রতিনিধি ঘুম-খাওয়া ছেড়ে অনশনে বসেছেন। সঙ্গে কয়েক জন সহযোদ্ধাও আছেন। অন্যদিকে, চাকরীহারাদের একাংশ শহিদ মিনারের কাছে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থানে বসেছেন। উভয় ক্ষেত্রেই চাকরী ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ফলে যে চাকরি চলে গিয়েছে, সসম্মানে সেই পদেই আবার ফিরিয়ে দিতে হবে। রাজ্য সরকার-সহ সব পক্ষের কাছে এই আর্জি জানিয়েছেন চাকরিহারারা। শুক্রবার তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। তার পরেও অবস্থান চলছে।
শহিদ মিনারের সামনে যাঁরা বসেছেন, তাঁদের মধ্যে থেকে ১৩ জন শুক্রবার ব্রাত্যের বৈঠকে গিয়েছিলেন। এই ১৩ জনের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে তাঁরা জানান, তাঁদের দাবি অনুযায়ী সরকার যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশে রাজি হয়েছে। আইনি পরামর্শ নিয়ে ২১ এপ্রিলের মধ্যে ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সরকারের এই আশ্বাসে আপাতত কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন চাকরিহারাদের একাংশ। তবে তাঁরা এখনই নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কারণ, চাকরি ফেরতের কোনও নিশ্চয়তা মেলেনি। শুক্রবার রাতেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চাকরিহারা প্রার্থীরা জানান, গান্ধীমূর্তির পাদদেশে শনিবার থেকে তাঁদের অবস্থান চলবে।
যত ক্ষণ না পর্যন্ত যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে এবং ২২ লক্ষের ওএমআর শিটের ‘মিরর ইমেজ’ ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে, তত ক্ষণ অবস্থান প্রত্যাহার করবেন না তাঁরা। কলকাতার পাশাপাশি দিল্লিতেও অবস্থানের পথে হাঁটবেন তাঁরা। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে দিল্লির যন্তরমন্তরেও অবস্থান বিক্ষোভ শুরু হবে। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন অন্তত ১৫০ জন চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী। এসএসসি ভবনের সামনে চাকরিহারাদের একাংশ অনশন শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার থেকে অনশনে রয়েছেন সুমন বিশ্বাস, পঙ্কজ রায় এবং প্রতাপ রানা। তাঁদের সঙ্গে সহযোদ্ধারাও কয়েক জন বসে আছেন।
‘মিরর ইমেজ’ প্রকাশের দাবিতে এই অনশন চলছে। যদিও এই অনশনকারীদের ‘রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত’ বলে শুক্রবার উল্লেখ করেছেন ব্রাত্য। তিনি জানান, যাঁরা বিকাশ ভবনের বৈঠকে এসেছেন, তাঁদের কেউ অনশন করছেন না। চাকরিহারাদের একাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা অনশনে বসেছেন। এসএসসি ভবনের সামনে এই অনশনকারীদের সঙ্গে দেখা করতে শুক্রবার গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনিই প্রথম চাকরি বাতিলের রায় দিয়েছিলেন, যে রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
অভিজিৎকে এসএসসি ভবনের সামনে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান শুনতে হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে এসএসসির ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিল করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। চাকরি গিয়েছে ২৫,৭৩৫ জনের। এই চাকরিহারাদের মধ্যে অনেক ‘যোগ্য’ প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের আলাদা করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আদালতের কাছে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবে রাজ্য। রিভিউ পিটিশনও দেওয়া হবে। তত দিন চাকরিহারাদের স্বেচ্ছায় পরিষেবা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীও শুক্রবার একই অনুরোধ করেন। কিন্তু স্বেচ্ছায় পরিষেবা দিতে চাকরিহারারা নারাজ।