ব্যুরো নিউজঃ আফগানিস্তানঃ আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সর্বশেষ মার্কিন বিমান ছাড়তেই উল্লাসে ফেটে পড়েছে তালিবানরা। মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান মেরিন জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি সোমবার পেন্টাগনে এক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন। তিনি জানান, কাবুল থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার ঘোষণা করতে আমি এখানে এসেছি। আমরা আফগানিস্তানের সবাইকে বের করে আনতে পারিনি। তবে আমি মনে করি, যদি আমরা আরও ১০ দিন থাকতে পারতাম, তাহলে আমরা সবাইকে সরিয়ে নিতে পারতাম। আর এমনটাই আমাদের ইচ্ছা ছিল।’ পাশাপাশি ম্যাকেঞ্জি এটাও স্বীকার করেন, এখনও আফগানিস্তানে অনেক মানুষ হতাশ। পরিস্থিতি খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
সেই সঙ্গে তিনি জানান, কাবুলের স্থানীয় সময় অনুসারে সোমবার রাত ১২টা বাজার ১ মিনিট আগেই সি-১৭ সামরিক বিমানটি আফগানিস্তান ছাড়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৩১ আগস্ট সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ঘোষণা করেন। আর সেই অনুযায়ী সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হল ২০ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধ। এরপরই দেশটির রাজধানী কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফাঁকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করেছে তালিবানরা। মার্কিন সেনারা আকাশে ওড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী কাবুলসহ সারাদেশে আনন্দে মাতোয়ারা তালিবানরা।
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
রাতের আকাশে তারা ফাঁকা গুলি, আতশবাজি ছুড়ে সেলিব্রেট করেছে নিজেদের জয়। তারা নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করেছে। আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর আফগানিস্তানের সর্বশেষ সি-১৭ বিমান কাবুল বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
জানা গিয়েছে, সর্বশেষ বিমানটি কাবুল ত্যাগ করার পর সেকানে তালিবানদের বিজয়সূচক গুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। রাতের কাবুলে রাস্তায় রাস্তায় বন্দুক হাতে উল্লাস করতে দেখা যায় তালিবান সদস্যদের। শেষ বিমানটির কাবুল ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ এবং তালিবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ব্যাপক উদ্ধার অভিযানের অবসান হল।
গত ১৫ই অগাস্ট একটিও গুলি খরচ না করে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালিবানরা। তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি একজনও সেনা সদস্য বা অন্য কেউ। এ যেন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ ছিল। সে সময় থেকেই মূলত কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর থেকে উদ্ধার কার্যক্রম চলছিল।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই ঘটনাকে তালিবান ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে অভিহিত করেছে। আফগানিস্তান এখন পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছে বলে ঘোষণা করেছে তালিবান।
তবে এখনও যারা কাবুল ত্যাগ করতে পারেননি, তাদের জন্য কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকার এবং জোট বাহিনীর বিমানগুলোতে করে সব মিলিয়ে এক লক্ষ ২৩ হাজার বেসামরিক ব্যক্তিকে সরিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিদিন সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাসিন্দা কাবুল ছাড়ার সুযোগ পেয়েছেন।’
এই প্রসঙ্গে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ওয়াশিংটনে বলেছেন, ‘এটি ছিল ব্যাপক সামরিক, কূটনৈতিক এবং মানবিক কর্মযজ্ঞ এবং যা আমেরিকা অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েই বাস্তবায়ন করেছে। নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হল। সামরিক মিশন সমাপ্ত হয়ে নতুন এক কূটনৈতিক মিশন শুরু হল।’
যদিও অ্যান্টনি ব্লিনকেন এও বলেছেন যে, তালিবানকে বৈধতা অর্জন করতে হবে। সেই সঙ্গে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে কিনা এবং নাগরিকদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেওয়া, স্বাধীনতা দেওয়া, মহিলাদের অধিকার রক্ষা এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে দমন করছে কিনা-এসব বিষয় বিশ্ববাসীর নজরে থাকবে। তিনি জানিয়েছেন, কাবুলে কূটনৈতিক মিশন স্থগিত করে কাতারের রাজধানী দোহা’য় নিয়ে যাওয়া হলেও, আমেরিকান নাগরিক এবং যে আফগানদের মার্কিন পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁরা চাইলে তাঁদের আফগানিস্তান ছাড়তে সহায়তা করা হবে।