বিধ্বংসী আগুনে ঝলসে গেল কিছু প্রাণ
চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ গতকাল সন্ধ্যেবেলা স্ট্র্যান্ড রোডে দক্ষিণ পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাটের এক বহুতলে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১৪ তলা বিল্ডিংয়ের ১৩ তলায় আগুন লেগেছিল। ফলে সাথে সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। প্রাথমিক ভাবে স্থানীয়রা নিজেরাই আগুন নেভানোর কাজ করেন। এরপর দমকল কর্মীরা ১৫ টি ইঞ্জিন ও ২ টি স্কাই লিফট নিয়ে এসে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এই আগুন নেভাতে গিয়ে লিফটের দরজা খোলার সময় ভেতর থেকে আগুনের লেলিহান শিখায় প্রাণ হারান লিফটে থাকা ১ জন লিফটম্যান, দমকল আধিকারিক গিরিশ দে এবং দমকল কর্মী গৌরব বেজ, অনিরুদ্ধ জানা, বিমান পুরকায়েত সহ ১ জন আরপিএফ কর্মী ও কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর অমিত ভাওয়াল। এছাড়া আগুনে ঝলসানো একটি লিফট থেকে ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মন্ডল এবং তাঁর ১ জন রক্ষী আরপিএফ কনস্টেবল সঞ্জয় সাহানির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তবে মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর কয়েকজন নিখোঁজও হয়েছেন।
আগুন লাগার ঘটনায় সড়ক পথ বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্বাভাবিক ভাবেই সোমবারের সন্ধ্যায় নিত্য যাত্রীরা সমস্যা্র মধ্যে পড়েছিলেন। প্রবল আগুনে রেলের সার্ভার রুমটি ভস্মীভূত হওয়ায় উত্তর-পূর্ব ভারতে রেলের বুকিং ব্যবস্থা ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়েছে। কিন্তু আগুন লাগার কারণ এখনো জানা যায়নি।
ঘটনাটি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি মৃতদের পরিবারের এক জনকে সরকারী চাকরী দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন”। রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুরো বিষয়টি দেখেন।
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে জানিয়েছেন, “কলকাতায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় আমি মর্মাহত ও শোকাহত। মৃতদের পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছি। এর পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে”।
যদিও এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী রেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, “রেলের ভবন হওয়া সত্ত্বেও ঘটনাস্থলে তাদের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি। দমকলকর্মীরা ভবনটির ম্যাপও চাইলে তাও দেওয়া হয়নি। যার জেরে আগুন নেভাতে এবং উদ্ধারকাজ চালাতে অনেকটাই দেরি হয়েছে”।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে রেলমন্ত্রী পিযূষ গোয়েল জানিয়েছেন, “রেল রাজ্যের সঙ্গে সহযোগীতা করেই কাজ করেছে। গোটা ঘটনা উচ্চপর্যায়ে তদন্ত করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর রাজ্য সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে”।
স্ট্র্যান্ড রোডের অগ্নিকাণ্ডকে কেন্দ্র করে রাজ্য আর কেন্দ্রের মধ্যে তুমুল রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়ে গেছে।