চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ আজ রাজ্য সরকারের তরফে বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ পেশ করা হয়েছে। আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলকে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করলেন। ‘অপরাজিতা বিলে’ ধর্ষণের মামলায় কড়া শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের সমর্থনে বক্তব্য পেশ করতে উঠে সারা ভারতের সকল নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও তুলোধনা করতে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি।
মুখ্যমন্ত্রী বিল সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, “এই বিলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনা হয়েছে। আদালতের অনুমতি ছাড়া যাতে মহিলা বা শিশুর পরিচয় সামনে না আসে, সেটাও বলা আছে বিলে। এই ক্ষেত্রে আমরা তিন থেকে পাঁচ বছরের সাজার প্রস্তাব রাখছি।” কেন্দ্রীয় সরকারই বলছে কলকাতা সবথেকে নিরাপদ শহর। আর উত্তরপ্রদেশে সাত লক্ষ, গুজরাটে পাঁচ লক্ষ নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। বাংলার নামে সবাই কুৎসা করে বেড়াচ্ছেন। এটা করে আপনারা আরজি করের ঘটনাকে লঘু করে দিচ্ছেন।
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
এরপর বিজেপি বিধায়কদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা যেভাবে আমাকে অপমান করেছেন, আমরা কখনো আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে করিনি। কখনো ভেবেছেন, আমরা যদি ওইভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অসম্মান করি।” পাশাপাশি উন্নাও, হাথরাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, “দেশে ধর্ষণের মতো ঘটনায় শাস্তির সংখ্যা খুব কম। ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত করে চার্জশিট পেশ করেছে। মাত্র ২.৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।”
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
তবে গুজরাট ও উত্তরপ্রদেশে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করতেই পাল্টা বিজেপি বিধায়কেরা প্রতিবাদে চিৎকার করতে শুরু করে। আর মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবী তোলেন। তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধীদের জবাব দিয়ে হুঙ্কার দিয়ে বললেন, “আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ চাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। তার পরে বাকি কথা।’’ এদিকে শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক কাগজের কাটিং তুলে দেখাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “স্পিকার এগুলো ক্রস চেক করবেন। এগুলো সব ফেক নিউজ। ঠিক তথ্য হলে আমার কোনো আপত্তি নেই। যদি এগুলো ভুল হয়, উস্কানিমূলক হয়, তাহলে স্পিকার ডিলিট করে দেবেন।”
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
আর ‘‘আপনারা অনেক কথা বলতে বলতে বললেন ট্রেনেও রেপ হয়েছে। ট্রেনটা কি রাজ্য সরকারের?’’ পাশাপাশি কামদুনি মামলায় রাজ্যের তরফে বারবার আইনজীবী বদলের প্রশ্ন ওঠায় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “৭ ই জুন, ২০১৩ সালে ঘটনাটি ঘটেছিল। তিন সপ্তাহের মধ্যে সিআইডি চার্জশিট দিয়েছিল। ১০ ই জুলাই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের ২০ শে জানুয়ারী আদালত রায় দেয়। কোর্টটা তো আমাদের হাতে নেই। কোর্টটা তো আপনাদের হাতে আছে।”
আর সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনার কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, “যারা সারা দেশে ধর্ষিতা হয়েছেন, তাদের প্রতি শোকজ্ঞাপন করছি। সঙ্গে সঙ্গে সারা ভারতে সকল নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডের পর আমি কবিতা লিখেছিলাম।” তাছাড়া, শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, “বিরোধী দলনেতা বললেন, বিলটা আইন হিসেবে কার্যকর করতে হবে। রাজ্যপালকে বলুন বিলটা সই করে দিতে। তারপর যদি কার্যকর না হয়, সেটা আমরা দেখব।”