শপথের জন্য এবার ধর্নায় বসলেন রায়াত ও সায়ন্তিকা

Share

অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রায়াত হোসেন সরকারের শপথগ্রহণ ঘিরে আরও জট পাকল। রাজভবন অবস্থান বদল না-করায় বুধবার দুপুরে বিধানসভায় ধর্নায় বসে পড়লেন বরাহনগর এবং ভগবানগোলা বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী দুই তৃণমূল প্রার্থী। তাঁদের সঙ্গে ধর্নায় যোগ দিয়েছেন পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। সায়ন্তিকা এবং রায়াতের পাশে প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘শপথের জন্য মাননীয় রাজ্যপালের আসার অপেক্ষায় রয়েছি।’’

বিধানসভায় যখন সায়ন্তিকারা ধর্নায়, তখন রাজভবন সূত্রে খবর, রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সাড়ে তিনটে নাগাদ রওনা হয়েছেন দিল্লির উদ্দেশে। মঙ্গলবারই রাজভবন জানিয়েছিল, বুধে সায়ন্তিকাদের শপথের জন্য সমস্ত ব্যবস্থা থাকবে। তাঁরা রাজভবনে গিয়ে শপথ নিতে পারেন। কিন্তু তৃণমূলের দুই জয়ী প্রার্থী জানিয়ে দেন, তাঁরা বিধানসভাতেই শপথ নেবেন। কোনও ভাবেই রাজভবন যাবেন না। রাজভবন থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয় সেখানে শপথগ্রহণের সম্পূর্ণ ব্যবস্থা থাকবে।


তবে রাজ্যপাল বোস অপেক্ষা করবেন সাড়ে তিনটে পর্যন্ত। সেই মতোই সাড়ে তিনটের পরে রাজভবন থেকে দিল্লির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন রাজ্যপাল। এই সংঘাতের আবহে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সংবিধানের স্রষ্টা বিআর অম্বেডকর বলেছিলেন, মধ্য মেয়াদে যদি কেউ বিধায়ক হন, তা হলে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন বিধানসভার স্পিকার।’’ বিমান জানিয়েছেন, যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে তিনি আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছেন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির কাছেও তিনি যাবেন।


মঙ্গলবার সকাল থেকেই সায়ন্তিকা এবং রায়াতের শপথ নিয়ে সরগরম বাংলার রাজনীতি। এক দিকে রাজ্যপাল চান, সায়ন্তিকারা রাজভবনে গিয়ে তাঁর কাছে শপথ পাঠ করুন। অন্য দিকে, সায়ন্তিকাদের বক্তব্য, তাঁরা রাজভবনে যাবেন না। কারণ হিসাবে জানিয়েছেন, প্রথমত, রাজভবন তাঁদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্র নয়। তাঁদের কাজ করতে হবে বিধানসভায়। আর রাজভবন থেকে সেই বিধানসভার স্পিকারকে অপমান করা হয়েছে। তাই তাঁরা কোনও ভাবেই সেখানে শপথ পাঠ করতে যাবেন না। মঙ্গলবার বেলা থেকে শুরু হওয়া এই ঘটনাপ্রবাহের শেষ দফায় বিধানসভার স্পিকারের কাছেই পরামর্শ চাইতে এসেছিলেন সায়ন্তিকারা। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা তাঁদের কথা হয় বিধানসভায় বিমানের ঘরে। তার পরে বেরিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা জানান।


ঘটনার সূত্রপাত, দিন কয়েক আগে। তৃণমূল অভিযোগ করে, রাজভবনের সবুজ সঙ্কেত না-পাওয়ায় ভোটে জিতেও শপথ নিতে পারছেন না বরাহনগরের বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সায়ন্তিকা এবং ভগবানগোলা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়ী তৃণমূলের রায়াত। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই রাজভবনের তরফে ব্যক্তিগত ভাবে চিঠি পাঠিয়ে শপথ নিতে আসতে বলা হয় সায়ন্তিকা এবং রায়াতকে। যদিও বিধানসভার স্পিকারকে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি রাজভবন।

পরে বিধানসভার সচিবালয়ের কাছ থেকে বিধায়ক সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়ে পাঠায় রাজভবন। এতেই ক্ষুব্ধ হন বিধানসভার স্পিকার বিমান। তিনি ২০ জুন একটি চিঠি দিয়ে রাজ্যপালকে সাংবিধানিক নিয়ম স্মরণ করিয়ে দেন। অন্য দিকে, সায়ন্তিকারাও চিঠি দিয়ে রাজ্যপালকে জানিয়ে দেন, তাঁরা রাজভবনে নয়, বিধানসভায় স্পিকারের কাছেই বিধায়ক হওয়ার শপথ নিতে চান। সোমবার পর্যন্ত বিষয়টি এখানেই থমকে ছিল।

আচমকাই মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি নতুন মোড় নেয়। রাজভবনের তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি বিস্তারিত জবাবি পোস্ট করা হয়। তাতে বিধানসভার স্পিকারের কড়া সমালোচনা করে রাজ্যপাল জানান, নবনির্বাচিত প্রার্থীদের শপথ নেওয়ার বিষয়ে যে চিঠি স্পিকার দিয়েছেন, তাতে রাজ্যপাল এবং রাজভবনের সাংবিধানিক মর্যাদাকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। কারণ সংবিধানেই বলা আছে বিধায়কদের শপথগ্রহণের বিষয়ে শেষ কথা বলবেন রাজ্যপাল। এর আগে ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জয়ী নির্মলচন্দ্র রায়ের শপথ নিয়েও একই রকম জটিলতা তৈরি হয়েছিল। শেষ অবধি নির্মলচন্দ্র রায় রাজভবনে গিয়েই শপথ নিয়েছিলেন।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930