নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মুম্বইঃ আবারও ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে নক্ষত্রপতন ঘটলো। আজ ভোর ৭ টা ৩০ মিনিটে কিংবদন্তী অভিনেতা দিলীপ কুমার মুম্বইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে প্রয়াত হলেন। প্রয়াণকালে বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বেশ কয়েকদিন থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি ছিলেন। জনপ্রিয় বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সূত্রের ভিত্তিতে জানা গেছে, বিগত বেশ কিছু বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় শয্যাশায়ী ছিলেন। ফুসফুসে জল জমেছিল। চিকিৎসার পরিভাষায় যা ‘Bilateral pleural effusion’। আজ হিন্দুজা হাসপাতাল থেকে শবদেহ বান্দ্রার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর বিকেল ৫ টা নাগাদ সান্তাক্রুজের জুহু কবরস্থানেই শায়িত করা হবে। করোনা বিধি মেনে পুলিশের অনুমতিতে শুধুমাত্র কয়েকজন ঘনিষ্ঠরাই ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমারের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্র স্বর্ণ যুগের অন্যতম কিংবদন্তী দিলীপ কুমারকে মনে রাখবে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের জন্য। ১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার-ভাঁটা’ সিনেমা থেকে দিলীপ কুমার বলিউডে প্রথম পা রাখেন। এরপর থেকে একের পর এক দিলীপ কুমার অভিনীত ‘কর্মা’, ‘কাল্ট’, ‘শক্তি’, ‘ক্রান্তি’, ‘পাকিজা’, ‘মাশাল’, ‘দেবদাস’, ‘মধুমতী’, ‘নয়া দৌড়, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘মুঘলে আজম’, ‘রাম অউর শ্যাম’ এর মতো আরো অসাধারণ সিনেমা মানুষকে উপহার দিয়ে এসেছে।
দিলীপ কুমারের মৃত্যুতে নরেন্দ্র মোদী গভীর সমবেদনা জানিয়ে টুইট করে জানান, “দিলীপ কুমারজী ভারতীয় চলচ্চিত্র আপনাকে কিংবদন্তী হিসেবেই মনে রাখবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনার অভিনয়ে মুগ্ধ। ওঁর মৃত্যু সাংস্কৃতিক জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি সমবেদনা রইল”।
রাহুল গান্ধী টুইট করে লেখেন, “দিলীপ কুমারজীর পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং অনুরাগীদের প্রতি সমবেদনা রইল। ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে”।
স্ত্রী সায়রা বানু ও দিলীপ কুমারের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে বলেন, “গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য আগামী প্রজন্ম মনে রাখবেন”।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গৌতম ঘোষ টুইট করে জানালেন, “বিরাট ক্ষতি। খুবই মর্মান্তিক বিষয়। তাঁর বিশ্বে লক্ষ লক্ষ ফ্যান। এর মধ্যে আমি হলাম দিলীপ কুমারের পাগল ফ্যান। তাঁর ‘জোয়ার ভাঁটা’ ছাড়া সেই ছোটবেলা থেকে সব ছবি দেখেছি। ‘গঙ্গাযমুনা’ ৮ থেকে ৯ বার দেখেছি। ‘মধুমতী’ অগুন্তিবার দেখেছি। তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্সটাই অসাধারণ। আমার তাঁকে নিয়ে ছবি করার ইচ্ছে ছিল কিন্তু হয়নি। তাঁর সব ছবির সংলাপ মনে আছে। ১ থেকে ২ বার দেখা করার স্মৃতি রয়েছে। চমত্কার উর্দু বলতেন। খুব মিষ্টিভাষী। দিলীপ কুমারের ছবিগুলোকে আর্কাইভ করা উচিত। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র জগতকে উনি আলোকিত করে রেখেছিলেন”।
শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় টুইট করে লিখেছেন, “মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। একের পর এক স্তম্ভের চলে যাওয়াটা আমাদের আরো বেশী নাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা যুগাবসান হলো। আমি তাঁর সিনেমা দেখে গুণমুগ্ধ। কিছু অভিনেতা থাকেন যাঁর সঙ্গে রুপোলি পর্দার প্রেম তৈরী হয়। উনি সেরকমই ছিলেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি”।
অমিতাভ বচ্চন টুইট করে বললেন, ” গভীরভাবে দুঃখিত। একটা প্রতিষ্ঠানের অবসান। ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাস লেখা হলে দিলীপ কুমারের নাম শুরু এবং শেষে সর্বদাই থাকবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। এই কঠিন সময়ে পরিবার-পরিজনদের লড়াই করার মতো শক্তি দিক”।
শাহিদ কাপুর টুইট করে বলেছেন, “দিলীপ সাহেব আমরা আপনার সংস্করণ মাত্র। আপনার বিষয়ে প্রত্যেক অভিনেতাই বিস্ময় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। জেনেছেন। আপনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন স্যর। আপনি অনন্ত”।
রীতেশ দেশমুখ টুইট করে জানিয়েছেন, “দিলীপ সাহেবকে ক্যামেরার সম্মুখীন হওয়া প্রতিটা অভিনেতাই ধন্যবাদ জানাবেন। প্রকৃতই এক প্রতিষ্ঠান। আমার পিঠ চাপড়ানো, কপালে চুম্বন ভীষণ মিস করব। তিনি প্রতিটা প্রজন্মের কাছেই প্রকৃত হিরো”।
এর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় অক্ষয় কুমার, সোনু সুদ, এষা দেওল, শ্রদ্ধা কপূর, করিনা কপূর খান, পরিচালক হনসল মেহেতা, মনোজ বাজপেয়ী, সুভাষ ঘাই, মধুর ভাণ্ডারকর সহ আরও অনেকে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেছেন। দিলীপ কুমারের মৃত্যু যেন এক যুগের অবসান ঘটালো।