নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নয়া দিল্লিঃ জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি পদক্ষেপ করল ভারত। জলচুক্তি থেকে শুরু করে সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা, ভিসা বাতিল— নেওয়া হল একের পর এক কড়া সিদ্ধান্ত। বুধবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাসভবনে জরুরি বৈঠকে বসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটি (সিসিএস)। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সেই বৈঠক চলেছে। বৈঠক শেষের পর রাত ৯টা নাগাদ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিসিএসের কর্তারা। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন। জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে সম্প্রতি সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপত্যকায় উন্নতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতি হচ্ছে। সেই আবহে এই হামলা।
প্রথমত, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নয়াদিল্লি। যত দিন না পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রতি তার সমর্থন প্রত্যাহার করছে, তত দিন এই চুক্তি স্থগিত থাকবে।
দ্বিতীয়ত, আট্টারি-ওয়াঘা সীমান্ত অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। উপযুক্ত নথিপত্র নিয়ে যাঁরা এই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের ১ মে পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে এই সীমান্ত দিয়েই তাঁদের ফিরে যেতে হবে।
তৃতীয়ত, ‘সার্ক ভিসা অব্যাহতি প্রকল্প’ (এসভিইএস)-এর অধীনে কোনও পাকিস্তানি নাগরিককে আর ভারতে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অতীতে এই ভিসায় প্রবেশের জন্য পাকিস্তানিদের যত অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হচ্ছে। এই ভিসা প্রকল্পের অধীনে যে সমস্ত পাকিস্তানি এখন ভারতে আছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের দেশ ছাড়তে হবে। উল্লেখ্য, এসভিইএস হল ‘সার্ক’-এর দেশগুলির (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা) মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বিশেষ চুক্তি, যার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভিসা ছাড়াও এই সাত দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারেন নাগরিকেরা। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এই অনুমতি তুলে নিচ্ছে ভারত।
চতুর্থত, ইসলামাবাদে উপস্থিত ভারতীয় দূতাবাস থেকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বায়ু উপদেষ্টাকে ফিরিয়ে নিচ্ছে ভারত। তাঁদের সহকারীদেরও তুলে নেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, নৌ উপদেষ্টা এবং বায়ু উপদেষ্টাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হচ্ছে। ভারত ছাড়ার জন্য তাঁদের এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
পঞ্চমত, ভারতীয় দূতাবাসের সদস্য সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হচ্ছে। ১ মে ২০২৫ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় মোট ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি নাগরিক রয়েছেন। অভিযোগ, পর্যটকদের ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতে বেছে বেছে গুলি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি ধর্মের মানুষ ছাড়া কাউকে রেয়াত করা হয়নি। এই ঘটনার পর তিন বাহিনীকেই সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। উচ্চপর্যায়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পাঁচ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েই সাংবাদিক বৈঠক শেষ করেছেন বিদেশ সচিব। মন্ত্রকের তরফে কোনও আধিকারিক সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন গ্রহণ করেননি।