‘২০২৬ শে আরো বেশী সিট নিয়ে জিততে হবে’, সভা শেষে বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর

Share

চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ ১৯৯৩ সালের ২১ শে জুলাই ১৩ জন যুব কংগ্রেসের নেতা-কর্মীর মৃত্যুকে স্মরণে রেখে বিগত দু’দশক ধরে তৃণমূল কংগ্রেস এই দিনটিতে শহিদ দিবস পালন করে থাকে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। প্রতি বছরই আজকের দিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামীর দিক্‌নির্দেশ দেন। এদিন মঞ্চে উঠে সকলকে স্বাগত জানিয়ে প্রথমেই সিপিএমকে নিশানা করেন। তবে বিজেপিকে কটাক্ষ করতেও পিছপা হননি। আর বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ নিয়েও সরব হন।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘এই সংগ্রাম চলবে, আর সেদিন শেষ হবে যেদিন দিল্লিতে পরিবর্তন হবে। আর বামেদের কথা ছেড়ে দিন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ে টাকা খেয়ে বসে আছে। আমরা এখানে চল্লিশ শতাংশ বেকারত্ব কমিয়েছি। এটা বাংলার মানুষের গর্ব। আপনারা একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে কি ভেবেছিলেন? বাংলা করতে পারে না? আমরা পেরেছি।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবী, ‘‘কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও সরকার বাংলার মানুষের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অনেক জনহিতকর প্রকল্প রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। আবাস প্রকল্পে গরীবদের বাড়ি দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল সরকার বিভিন্ন ধর্মস্থানের উন্নতিকল্পে কাজ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।’’ এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির চক্রান্ত তো চলছে। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদছে। মানুষের কথা বলে না তারা।


নির্বাচনের আগে প্রথম সার্কুলার ভারত সরকার পাঠিয়েছে। এক হাজারের উপর লোককে কাউকে মধ্যপ্রদেশ, কাউকে ওড়িশা, তো কাউকে রাজস্থানের জেলে ভরা হয়েছে। কি ভেবেছ? ইডি-সিবিআই দিয়ে শেষ করবেন? চ্যালেঞ্জ রইল। ড্যামেজ ম্যানেজ করা যায় না। কত জনকে জেলে জায়গা দেবেন?’’

বিজেপির এক জন নেতা বলেন, ‘এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে। সবাইকে ভোটার লিস্ট থেকে বাদ দিতে হবে।’ মোট কত রোহিঙ্গা? আপনি এত জনকে বাংলাতেই বা পেলেন কোথায়? মতুয়া ভাইদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। কি জবাব দেবে তার বিজেপি? যখন ওড়িশায় ছাত্রীর সম্মান নষ্ট হলো, যখন ওড়িশার রাস্তায় ছাত্রীর গায়ে আগুন ধরানো হয়, তার উত্তর কে দেবে? উত্তর দিতে হবে।’’


অন্যদিকে, নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে জানালেন, “বাংলা ভাষায় কথা বললে অ্যারেস্ট করবেন, আর টেলি প্রম্পটার দেখে দুটো বাংলা কথা বলবেন? মনটা বড়ো করতে শিখুন। দেশের কি অবস্থা? আপনাদের কন্ট্রোল করছে আমেরিকা প্রেসিডেন্ট। কেন পাক অধিকৃত কাশ্মীর দখল করতে পারলেন না? এত রক্তের বিনিময়েও? আপনারা না হিন্দু না মুসলমান, না খ্রিস্টান। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যখন কোমরে দড়ি বেঁধে পাঠিয়ে দিলেন, তখন আপনারা প্রতিবাদ করেননি কেন? আগে নিজেদের আয়নায় দেখুন, তারপর বলুন।”

পাশাপাশি বিজেপিকে নিশানা করে বলেছেন, ‘‘আপনারা বাংলায় কথা বলতে ভয় পান। বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দিয়েছে। বাংলা থেকেই জাতীয় সঙ্গীত লেখা হয়েছে। বাংলায় একের পর এক উন্নয়নে ভয় পেয়ে বিজেপি বঞ্চনার রাজনীতি করছে। বাংলা জুড়ে কাজ হয়েছে। তাই বাংলাকে নিশানা করছে। বাংলা ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে কেন? বাংলা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। বাংলা থেকেই নবজাগরণ হয়েছে। বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না।


আর বাংলা ভাষায় নাকি কথা বলা যাবে না! কে মাছ খাবে, কে মাংস খাবে, কে ডিম খাবে ওরা ঠিক করে দেবে! দোকানে গিয়ে বলছে, মাছ খাবেন না, মাংস খাবেন না। দোকানে গিয়ে ভাঙচুর করছে। বাংলায় এক বার করে দেখাও, সাহস দেখি।” বাঙালী পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে গিয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য যেভাবে আক্রমণ ও হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে, তার তীব্র প্রতিবাদ করে জানিয়েছেন, “আমি বাংলা ভাষায় কথা বলি। অন্য ভাষাকে অসম্মান করি না।

আমাদের রাজ্যে দেড় কোটি ভাই-বোন রয়েছে, তাদের উপরে তো কোনো সন্ত্রাস হয় না। আপনারা আমাদের রাজ্যের শ্রমিকদের উপরে সন্ত্রাস করছেন কেন? দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন হবে। দেখতে চাই কত সাহস আপনার, কত জেল আছে। বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয় এই লড়াই কিন্তু দিল্লিতে হবে। আমি কিন্তু ছাড়ার লোক নই। মনে আছে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের কথা? দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন শুরু হবে।

কোনো ভাষার উপরে আক্রমণ মানব না। আগামী নির্বাচনের রেজাল্ট বেরোনো অবধি আন্দোলন চলবে।” এছাড়া জানিয়েছেন, ‘‘দলের সম্পদ কর্মীরা। আমার দলের সম্পদ বাংলার মা-মাটি-মানুষ। যখন তৃণমূল জন্ম নিয়েছিল, বলেছিল ঘাস গরুতে খেয়ে নেবে। এখন তৃণমূল বটবৃক্ষ। যারা ভাবছেন মমতা-অভিষেককে গালাগালি দিয়ে তৃণমূলকে গুঁড়িয়ে দেবেন, বড়ো ভুল করছেন।

এখান থেকেই বলেছিলাম বদলা নয়, বদল চাই। এবার বলছি, ‘জব্দ হবে, স্তব্ধ হবে। আমাদের দর্শন, তোমাদের বিসর্জন। বাকিটা নির্বাচনের সময় বুঝিয়ে বলব।’’ এদিন এও জানিয়েছেন, ‘‘২৭ শে জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনিবার এবং রবিবার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে মিটিং-মিছিল করুন। প্রতিবাদে নামুন। এবার ভাষা রক্ষার শপথ শুরু হয়েছে। বেশী করে বাংলা বলুন।”

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031