নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আসানসোলঃ সামনেই নির্বাচন। আর ঠিক এর আগেই গতকাল আসানসোলে বিজেপির ঘোষিত প্রার্থী পবন সিং নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘পবন সিং বাংলার মহিলাদের নিশানা করে অশ্লীল গান রচনা করেছিল। ফলে শাসকদলের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এর জেরে রাতারাতি তিনি নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে যান।”
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পবন সিংয়ের এই সিদ্ধান্তকে বাংলার মানুষের জয় হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলায় এসে নারীশক্তি ও নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক বক্তৃতা দিয়ে গেলেন। এরপর এমন একজনকে টিকিট দিলেন, যিনি বাংলার নারীদের অপমান করেছেন। এটাই হলো ‘মোদীর গ্যারান্টি’। যদি আপনি বাংলার এবং মহিলাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাহলেই বিজেপি আপনাকে টিকিট দেবে।
তিনি শুধু বদলা নেওয়ার জন্য দু’বছর ধরে বাংলার হকের টাকা আটকে রেখেছেন। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের বাকি রাখা টাকা নিজের কোষাগার থেকে মেটাচ্ছে। এই কারণেই আমরা ওদের বাঙালী-বিরোধী, বাংলা-বিরোধী ও জমিদার বিজেপি বলে সম্বোধন করি। আগামী ১০ ই মার্চ আয়োজিত হতে চলা জনগর্জন সভায় মানুষ এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠবেন।”
আসানসোলে দলের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা বলেন, ‘‘আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় রাজনীতিক। আমি আসানসোলে একজন সৈনিক হিসাবে এসেছি। গতবার আমরা নয়া রেকর্ড গড়েছিলাম। আমাদের নেতৃত্বের বিশ্বাস, এবার আমরা সেই রেকর্ড ভেঙে দেব। আমাদের জেলা নেতারা যেমন বললেন, আমাদের এবারের লক্ষ্য জয়ের ব্যবধান তিন লক্ষ থেকে বাড়িয়ে চার লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষে নিয়ে যাওয়া।’’
বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জানালেন, ‘‘বিজেপির ঘোষণার পর শত্রুঘ্ন সিনহা পবন সিংকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ও আসানসোলের রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে তাঁকে স্বাগতও জানিয়েছিলেন। কিন্তু যখন পবন সিং গ্রাউন্ট রিপোর্ট পেলেন তখন বুঝে গেলেন এখানে কেউ শত্রুঘ্ন সিনহাকে পরাজিত করতে পারবেন না। বিজেপির এমনই অবস্থা যে প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না। যাঁকে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করানো হলো তিনিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পালিয়ে গেলেন।’’
অন্যদিকে যিনি প্রথম পবন সিংয়ের প্রার্থীপদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সেই বিধায়ক অর্থাৎ বাবুল সুপ্রিয় বলেছেন, ‘‘বিজেপি একটি নারীবিদ্বেষী দল। লোকসভায় তাদের মহিলা সাংসদদের অংশীদারিত্ব মাত্র ১৩ শতাংশ। কোনোদিন বিজেপি বাঙালী ভাবাবেগ বুঝবে না। ওরা ভেবেছিল, পবন সিংকে প্রার্থী করে অবাঙালী ভোট ব্যাঙ্কের ফায়দা তুলবে। যে ব্যক্তির গানের কথা বাঙালী নারী বিরোধী, বিজেপি তাঁকে ভোটে দাঁড়ানোর টিকিট দিতে পারে কিভাবে? আর কোনো প্রার্থীরই সম্মতি ছাড়া কাউকে টিকিট দেওয়া যায় না।
তাই এর থেকেই প্রমাণিত পবন সিং বাধ্য হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে প্রার্থী হিসাবে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে। এমনকি এদিন সকালেও পবন সিং সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং অমিত মালব্য তাঁর প্রার্থীপদকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু এই হঠাৎ পটপরিবর্তন আসলে বিজেপির মধ্যেই একটি টেকটনিক শিফ্ট। তবে বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। পবন সিংকে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত বাঙালী মহিলাদের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।’’
রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আসানসোলের প্রার্থী হিসাবে ফের একবার শত্রুঘ্ন সিনহার নাম ঘোষণা করা হবে, তা শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা খুশি ছিলেন। আর সেই কারণেই এই কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে পবন সিংয়ের নাম ঘোষিত হতেই তিনি পালিয়ে বাঁচলেন।’’