নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নয়া দিল্লিঃ ইতিহাসে এই প্রথমবার প্যানডেমিক পরিস্থিতির জেরে পেপারলেস বাজেট পেশ করা হলো যা পুরোটাই অনলাইনের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে। আজ সকাল ১১টা থেকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন লোকসভায় অধিবেশনে এই বাজেট পেশ করলেন। প্রথমেই তিনি জানান, “এই বছরের বাজেট অভূতপূর্ব হবে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে”।
অতিমারী পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে একাধিক মিনি-বাজেট পেশ করেছে কেন্দ্র। যার মোট পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ কোটি। ২০২১-২২ অর্থ বর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক যে বাজেট তৈরি করেছে তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুমোদন দিয়েছেন। চলতি বছরের বাজেটে মোট ছ’টি স্তম্ভ রয়েছে। সেগুলি হলো স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, সার্বিক উন্নয়ন, মানব সম্পদ বৃদ্ধি, মিনিমাম গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স।
আগামী ছ’বছরের জন্য স্বাস্থ্যখাতে ৫৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে। স্বাস্থ্যখাতে ১৩৭% বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হলো। প্রতিটি জেলাতে স্বাস্থ্য ল্যাব তৈরি হবে। গ্রামে ১৭ হাজার ও শহরে ১১ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হবে। করোনা প্রতিষেধকের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য খাতে ২ লক্ষ ৮৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
গ্রামের ১৭ হাজার আর শহরের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। ২০টি শহরে স্বাস্থ্যের দিক নজর রাখা হবে।
পুরনো যান যাতে দূষণ না ছড়াতে পারে তার জন্য শীঘ্রই সেগুলি বাতিল করা হবে। ২০ বছর পর ব্যক্তিগত যান বাতিল।
পরিমণ্ডলকে শুদ্ধ করতে ২ হাজার কোটির বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে।
স্বচ্ছ্ব ভারতে ১ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
৬৭৫ কিমি রাস্তা পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হবে। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তা সংস্কারের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কলকাতা-শিলিগুড়ি রাস্তা সংস্কার হবে। ডানকুনি-গোমো লাইনের কাজ হবে। খড়গপুর-বিজয়ওড়াতে ফ্রেড করিডোর করা হবে।
৩৫০০ কিমি রাজ্য সড়ক তামিলনাড়ুতে তৈরি হবে। এর মধ্যে মাদুরাই কল্যাণ করিডোর রয়েছে।
১১০০ কিমি রাস্তা কেরলে তৈরি হবে।
১৯০০০ কিমি রাস্তা অসমে মেরামত করা হচ্ছে। যেখানে ১০০০ কিমিরও বেশি জাতীয় সড়ক রয়েছে।
৬০০০ কিমি মুম্বই-কন্যাকুমারী রাস্তা তৈরি হবে।
১৩ হাজার কিমি রাস্তা তৈরির জন্য ৫.৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আরো ৮৫০০ কিমি রাস্তা তৈরি হবে। এর মধ্যে ইকোনমিক করিডোরও রয়েছে।
মূলধন খাতে ৪৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচারের জন্য ৪.২১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া প্রয়োজন। ৩ বছর ৫ লক্ষ কোটি টাকা ধার নিতে হবে। বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে পারবেন।
টেক্সটাইল পার্ক তৈরি করা হবে। উত্পাদন শিল্পের জন্য ১৩ টি জায়গা বেছে নেওয়া হবে। উন্নত জামাকাপড় তৈরি হবে দেশে। রপ্তানি এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশ্বমানের পরিকাঠামো থাকবে।
জল জীবন মিশনের জন্য ২ লক্ষ ৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ২.৮৬ কোটি মানুষ কলের জল পাবে।
স্বচ্ছ ভারত মিশনের জন্য ১.৪১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পুষ্টি প্রকল্পগুলিকে একত্র করে ১১২ টি জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরিকাঠামোর জন্য তিন বছরে ৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।
২০ হাজার বাস রাস্তায় নামবে। মেট্রো ও বাস সার্ভিসের জন্য জন্য ১৮ হাজার কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে।
রেলের জন্য জাতীয় রেল প্ল্যান তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প যুক্ত। যাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্য পরিবহন সহজ হয়। ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি রেলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ১ লক্ষ কোটিরও বেশি মূলধন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে।
ট্রেন প্রটোকশন সিস্টেম দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি। সেটি কার্যকর করা হবে। কোচের আধুনীকিকরণ এবং নিরাপত্তাজনিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কম বয়সীদের জন্য নতুন সম্ভাবনা আছে।
১ লক্ষ ৪৭ হাজার কোটি টাকা মূলধনী খাতে ব্যয় এই কারণে বরাদ্দ করা হয়েছে।
মাল্টি স্টেট কো-অপারেটিভের প্রসার ঘটবে। ১৫ ফিনান্স কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সেন্ট্রালি স্পনশরড প্রকল্পগুলিকে বাড়ানো হচ্ছে।
১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা ডিসইনভেস্টমেন্ট থেকে পাওয়া যাবে।
এয়ারইন্ডিয়া, বিপিসিএল, পবনহংয়ের বেসরকারীকরণ হবে।
যে বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে আছে তা বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। আর যে সব সরকারী সংস্থা লাভ করতে পারছে না তাদের বিক্রি করা হবে। এর ফলে যে টাকা পাওয়া যাবে সেটি বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে।
এল আই সির শেয়ার বাজার বিক্রি করা হবে।
গোয়ায় পর্তুগিজদের থেকে স্বাধীনতা পালিত হচ্ছে তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ন্যাশনাল নার্সিং কমিশন তৈরি হবে।
আগামী পাঁচ বছরের জন্য ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই টাকা সমুদ্রের সম্মদ আবিষ্কারের জন্য ব্যয় হবে।
৪ জন ভারতীয় মহাকাশচারীকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে।
ইন্টারনেটে তথ্য ভারতীয় মূল ভাষাগুলিতে পাওয়া যাবে।
ডিজিটাল ট্রানজাকশনের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ যাতে ডিজিটাল মোড অফ পেমেন্ট বিস্তৃত।
জাপানি ভোকেশনার স্কিম পাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ। আরবের সঙ্গে পার্টনারশিপ। যাতে ট্রেনি বিনিময় করতে পারি।
মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৫ হাজার বিদ্যালয়কে নতুন এডুকেশন পলিসি দেওয়া হবে। আদিবাসীদের জন্য ৭৫৮ টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। তপশিলি জাতিদের পোস্ট ম্যাট্রিক স্কলারশিপ বাড়ানো হল। এর ফলে ৪ কোটি পড়ুয়া উপকৃত হবে।
লাদাখে উচ্চশিক্ষার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের আওতায় যে প্রতিষ্ঠানগুলি এর আওতায় আসবে। উচ্চশিক্ষার জন্য নতুন কমিশন গঠন করা হবে।। এদের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ- সবই থাকবে।
অসম, পশ্চিমবঙ্গের চা শ্রমিকদের জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
১৭ টি রাজ্যকে এক কোটি ৭১ লক্ষ রেভিনিউ ডেফিসিট গ্রান্ট। রাজ্যগুলি ৪১ শতাংশ করের শেয়ার পাবে। ফুড কর্পোরেশনের লোনকে আওতাভুক্ত করা হয়েছিল। এবার তা বন্ধ করা হচ্ছে। রাজ্যগুলিকে ৪% ধার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
করদাতাদের ওপর কম করের চাপ দেওয়া হবে। ৭৫ বছরের হলে তাদের সুদের ওপর সম্পূর্ণ ছাড়। আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে না। গৃহঋণের সুদ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
বিদেশি ব্যাঙ্ক ও এয়ারক্রাফ্ট লিজিং কোম্পানিকে কর নিয়ে উত্সাহ। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য জিরো কুপোন বন্ড যাতে বাজারে আসে তার ব্যবস্থা করা হবে।
এনআরআইদের জন্য ডাবল ট্যাক্সেশন যাতে না হয় তার জন্য নিয়মের পরিবর্তন করা হবে।
৫০ লক্ষ বা তার বেশি লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সেটি রিওপেন করার জন্য চিফ কমিশনারের অনুমতি।
ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট ৬ বছরের মধ্যে রিওপেন করা যেত এখন সেটা ৩ বছরের মধ্যে রিওপেন করতে হবে।
স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া নামে নতুন প্রকল্পের জন্য মার্জিন মানি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫% করা হল। ৩২টি রাজ্যে এই প্রকল্প চালু হবে।
মেয়েরা সমস্ত ক্যাটাগরিতে কাজ করবেন। তার জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা থাকবে।
বস্ত্র, তুলো, চামড়া, সোল্য়ার ল্যাম্প, প্যানেল বোরিং মেশিন, সিন্থেটিক জেমস স্টোনসের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পেল। এমনকি মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশে ২.৫% আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি পাবে। স্টার্ট আপদের জন্য ট্যাক্স হলিডে বাড়িয়ে দেওয়া হলো।
সোনা ও রূপোর উপর আমদানি শিল্পে পরিবর্তন হলো।
শেয়ার ডিভিডেন্ট থেকে টিডিএস কাটা হবে না। জিএসটি খাতে রেকর্ড সংগ্রহ হয়েছে।