চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ আজও বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সন্ন্যাসী তথা ইস্কনের প্রাক্তন নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাস জামিন পেলেন না। এদিন চট্টগ্রাম আদালতে তাঁর জামিন মামলার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে আরো এক মাস চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রাম আদালতে থাকতে হবে।
সূত্রের খবর, এদিন চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে কোনো আইনজীবী আদালতে মামলা লড়ার জন্য রাজি ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ রা জানুয়ারী অবধি চট্টগ্রাম আদালত এই মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছে। ঘটনাচক্রে, গতকাল রাতেরবেলা ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমণ দাস দাবী করেছেন, ‘‘চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের আইনজীবীর উপর হামলা হওয়ায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।’’ এদিকে, তাঁর এক আইনজীবী জানান, ‘‘এদিন আদালতে তাঁদের উপরে হামলা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ফলে আতঙ্কিত আইনজীবীরা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিনের সওয়ালে হাজির হতে চাইছেন না।’’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। এই আবহে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ধর্মীয় সংগঠন মিলে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’ প্রতিষ্ঠিত করে। চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ওই মিলিত মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র। তাঁর ডাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষের জমায়েতও নজরে পড়ার মতো ছিল। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। পরে ২৫ শে অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের ডাকে একটি সমাবেশ আয়োজিত হয়েছিল।
সেদিনই চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ধর্মীয় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর জেরে চট্টগ্রামের এক জন স্থানীয় বিএনপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে ২৫ শে নভেম্বর অর্থাৎ গত সোমবার চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বর থেকে আটক করে পরে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন চট্টগ্রাম আদালতে পেশ করা হয়। তবে বিচারক জামিনের আর্জি মঞ্জুর না করে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আর এদিন মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
যদিও তা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন পুলিশ আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রাখে। পাশাপাশি আদালতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারী ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সেদেশের সরকারের।’’ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আশা করব চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনী অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’