কুকি জঙ্গিদের হামলায় মণিপুরে মৃত্যু হলো ২ জওয়ানের

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মণিপুরঃ ভোটপর্ব মিটতেই আবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মণিপুর অশান্ত হয়ে উঠলো। গতকাল গভীর রাতে বিষ্ণুপুর জেলার নারানসেনা জঙ্গিদের হামলায় সিআরপিএফের ২ জন জওয়ান নিহত হয়েছেন। আর গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে চার জন গুরুতর আহত হয়েছেন। নতুন করে অশান্তি শুরু হতেই মণিপুর জুড়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আর বিষ্ণুপুরেও নতুন করে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, গতকাল কুকি জঙ্গিদের একটি দল স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র এবং গ্রেনেড নিয়ে নারানসেনা ফাঁড়িতে হামলা চালায়। তাদের নিশানায় ফাঁড়ি লাগোয়া ব্যারাকটিও ছিল। সেখানে সিআরপিএফের ১২৮ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা ছিলেন। আচমকা জঙ্গি হানায় তারা আহত হন। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে কুকি জঙ্গিরা মোরেকে ফাঁড়িতে একই কায়দায় হামলা চালিয়েছিল।


চলতি মাসের শুরুতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই কয়েক জন জঙ্গি নিহতও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুরের কুকি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির সহায়তায় কেএনএফ জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩ রা মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম) -এর কর্মসূচী ঘিরে মণিপুরে অশান্তির সূত্রপাত হয়।


মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফশিলী জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি এর বিরোধীতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয়। মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জো সহ কয়েকটি তফশিলী জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষে এখনো অবধি প্রায় দু’শো জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ষাট হাজার মানুষ ঘরছাড়া।


পরবর্তী সময় ইম্ফল হাইকোর্ট ওই বিতর্কিত নির্দেশ প্রত্যাহার করলেও মণিপুরে শান্তি ফেরেনি। কারণ মেইতেইদের মনে নতুন আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে, কুকি, নাগা, অঙ্গামি, লুসাই, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ত্রিশটি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। ফলে তাদের অভিযোগ, ‘‘মেইতেইরা জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে। এখন জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় তারা ওই জমি কিনতে পারে না।’’

কিন্তু মেইতেইদের দাবী, ‘‘১৯৪৯ সালে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মণিপুর সংযুক্ত হওয়ার আগে তারা জনজাতি হিসাবে গণ্য হতেন। তবে সংযুক্তিকরণের পর সেই পরিচয় হারানোয় জনজাতি জমির অধিকার এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচও হারানোয় আজ নিজভূমেই কোণঠাসা।’’ যেখানে ১৯৫২ সালে মণিপুরের মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ মেইতেই ছিল, সেখানে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে তা ৪৪ শতাংশে এসে পৌঁছেছে।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930