চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণ কর্মসূচীতে অন্যতম ভূমিকা ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের

Share

চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ একদিকে যখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা নৃশংস কাণ্ডকে ঘিরে চারিদিকে নিন্দার ঝড় উঠেছে তখন অন্যদিকে চন্দ্রযান-৩ এর চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের ক্ষেত্রে ইসরোর সহযোগীর ভূমিকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক সহ কয়েকজন গবেষকের নাম উঠে এসেছে। যা আরো একবার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে জায়গা করে দিল।

রাজ্যের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে অবতরণের প্রকল্পে নেতৃত্বের মধ্যে ছিলেন পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অমিতাভ গুপ্ত ও ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সায়ন চট্টোপাধ্যায়। এছাড়া আরো কয়েক জন গবেষকও ছিলেন।


অমিতাভ গুপ্ত জানান, ‘‘ইসরোর চন্দ্রযান প্রকল্পে সহযোগী হওয়ার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে থেকে রেসপন্ড প্রকল্পের মাধ্যমে আবেদন জানানো হয়েছিল। যা গ্রাহ্য হয়। ফলে ২০১৭-১৮ সাল থেকে যাদবপুর ইসরোর চন্দ্র অভিযান সংক্রান্ত পাইলট প্রজেক্টে সহযোগী হয়েছিল। ভিনগ্রহে কিংবা উপগ্রহে সফট ল্যান্ডিং হলো মহাকাশ অভিযানের সব থেকে কঠিন ধাপ।


কিন্তু ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ সফল উৎক্ষেপণের পরেও নামতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছিল। এরপর ২০১৯ সাল থেকে এই কাজ শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এই কাজ শেষ হয়। এক জন পিএইচডির গবেষক, তিন জন স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র এবং কয়েক জন বিই (ইঞ্জিনিয়ারিং) ইন্টার্ন এই প্রকল্পে ছিলেন। যাদবপুরের গবেষণাগারে কাজের পাশাপাশি ইসরোর সদর দপ্তরেও যেতে হয়েছিল ’’


পাশাপাশি ইসরোর তরফ থেকে চাঁদে অবতরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দেওয়া হয়েছিল। এবার যাতে পালকের মতো মসৃণ ভাবে অর্থাৎ সফট ল্যান্ডিং করে তা নিয়ে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। আর চাঁদে পাড়ি দেওয়া বিক্রমে একাধিক ‘থ্রাস্টার’ ছিল। যা পালকের মতো চাঁদের মাটিতে অবতরণে সাহায্য করেছে। এই থ্রাস্টারগুলির মাধ্যমে জ্বালানী নিঃসরণ বাড়িয়ে-কমিয়ে নিরাপদ অবতরণ সম্ভব হয়।

মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই প্রযুক্তির নাম ‘হোভারিং টেকনোলজি’ অর্থাৎ অবতরণের আগে ল্যান্ডার হেলিকপ্টারের মতো একটি জায়গায় স্থির হয়ে প্রথমে চাঁদের কুমেরুর অবতরণস্থলটি নিরীক্ষণ করেছে। এরপর পরিস্থিতি বুঝে থ্রাস্টারের মাধ্যমে নিজেকে সোজা রেখে নীচে নেমে এসেছে।

তিনি ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা এই অবতরণের একটি পরিস্থিতি (রিয়েল টাইম সিমুলেশন) তৈরী করছিলেন। তারপর ল্যান্ডারের একটি মডেল তৈরী করে ওই সিমুলেশনের মাধ্যমে কম্পিউটারে নিরাপদ অবতরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়।’’ অন্যদিকে ওই প্রযুক্তির ‘ইমেজিং’ সংক্রান্ত গবেষণায় অন্যতম সহযোগীর দায়িত্বে সায়ন ছিলেন।

এই বিক্রমের অবস্থান অবতরণস্থল থেকে সরে গেলেও যাতে বোঝা সম্ভব হয়, তার জন্য অবতরণস্থলের আশপাশের অঞ্চলের বহু ছবি সংগ্রহ করা হয়েছে। লক্ষ্য ছিল, যদি ওই মহাকাশযান সরে যায় অথবা তির্যক কোণে থাকে তা হলে ছবি দেখেই অবস্থান বোঝা যাবে। যদিও শেষ অবধি সায়ন রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে নিরাপদেই অবতরণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘অতীতে ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীতেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নিয়েছিল। চন্দ্রযান-৩ সংক্রান্ত সফ্‌ট ল্যান্ডিংয়ের আমাদের এই অংশগ্রহণ নিঃসন্দেহে একটি স্বীকৃতি। এর সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ঘটনা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।’’

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031