মিনাক্ষী দাসঃ খাদ্যরসিক বাঙালীর কাছে জিভে জল আনা মুড়িঘন্ট একটি প্রিয় পদ। কিন্তু এই বিশেষ পদটির নাম মুড়িঘন্ট হলেও এই পদে কোনোভাবেই মুড়ির ব্যবহার করা হয় না। তবে ব্যবহার করা হয় মাছের মুড়ো।
তাহলে বাঙালী এই পদটির নাম মুড়িঘন্ট দিল কেন? এর কারণের পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস।
বিশেষ করে মধ্যযুগের গরীব নাবিকরা চন্দ্রভাগা অথবা তাম্রলিপ্ত বন্দর থেকে জাহাজ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস জাহাজে থাকাকালীন নাবিকদের জন্য কোনো খাদ্যের রসদ থাকত না। একমাত্র সহজলভ্য হিসেবে মাছই ছিল। তাই নাবিকরা ভাতের সাথে বিভিন্ন রকম মাছের পদ বানাতেন।
কিন্তু অবশিষ্ট হিসেবে মাছের মুড়ো ও ল্যাজা থেকে যেত। তখন নাবিকরা মাছের মুড়ো এবং ল্যাজার অংশ দুটি পাত্রের মধ্যে চালের সাথে একসাথে রান্না করতেন। কিছুটা পোলাওর মতো হতো। আর মাছের মুড়ো থাকায় এই খাদ্যের নাম মুড়িঘন্ট হয়ে গিয়েছিল।
যেহেতু বন্দরে বন্দরে নাবিকরা বাণিজ্য করতেন তাই মুড়িঘণ্ট পদটি খুব তাড়াতাড়ি পরিচিতি লাভ করেছে। সাদামাটা মাছের মাথা ও ল্যাজের সাথে বিভিন্ন রকম মশলা ব্যবহার করে পদটির স্বাদ পরিবর্তন করা হয়। ধীরে ধীরে তা জনপ্রিয়তাও লাভ করে।
এরপর এই সুস্বাদু মুড়িঘণ্ট আমাদের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো রেস্টুরেন্টেও সাদরে স্থান করে নিয়েছে। তাই বাঙালী হয়ে মুড়িঘণ্ট খায়নি এমন বাঙালী খুঁজে পাওয়া যাবে না।