পুকুর খনন নিয়ে দুর্নীতির জেরে বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীরা
শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ঃ দক্ষিণ দিনাজপুরঃ দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুবর্ণ সহীদ গ্রামের গ্রামবাসীদের অভিযোগ বিজেপি সমর্থিত গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও বিডিওর যোগসাজশে পুকুর কাটা নিয়ে দুর্নীতি চলছে। এছাড়া এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে লাশ ফেলে দেওয়ার হুমকির মুখে স্থানীয় তৃণমূলের কৃষক নেতা।
স্থানীয় গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় বছর দুয়েক পূর্বে সুবর্ণ সহীদ গ্রামের কয়েকজন গ্রামবাসীদের আবেদনের ভিত্তিতে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের অধীনে কয়েকটি পুকুর খননের জন্য সরকারীভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। গ্রামবাসীদের সূত্রে এও জানা যায় যে, সরকারীভাবে পুকুর খননের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর পুকুর খননের কাজ শুরু না হওয়ায় তারা খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট মারফত জানতে পারে আদৌতে পুকুর খনন না হলেও পুকুরের খননের জন্য বরাদ্দ টাকা ইতিমধ্যেই প্রদান করা হয়ে গেছে। এরপরেই গ্রামবাসীরা ঘটনার তদন্ত দাবী করে কুমারগঞ্জ ব্লকের বিডিও-র দ্বারস্থ হন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগের পরেই তড়িঘড়ি ব্লক প্রশাসন ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামে। কুমারগঞ্জ ব্লকের যুগ্ম বিডিও নিজে সরজমিনে পরিদর্শনে যান। তারপরেই কার্যত রাতারাতি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় স্থানীয় জব কার্ড থাকা শ্রমিকদের বঞ্চিত করে জেসিবি দিয়ে পুকুর কাটার কাজ শুরু হয়। তাছাড়া ওই গ্রামের বাসিন্দা রতন কুমার রায়ের জমিতে মাত্র প্রায় আড়াই ফুট গভীর একটি পুকুর কেটে রাতারাতি গ্রামবাসীদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য সেই পুকুর জল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়।
এমনকি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বারবার পরিযায়ী শ্রমিকদের একশো দিনের কাজে দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে চলেছেন সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জব কার্ড থাকা সত্বেও এলাকার পরিযায়ী শ্রমিকদেরকেও জব কার্ডের মাধ্যমে পুকুর খননের কাজ না দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করে বর্তমানে হুমকির মুখে তৃণমূলের কৃষক নেতা। শুধু তাই নয় একটি সূত্রের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক খবর জেসিবি দিয়ে পুকুর খনন বন্ধের প্রশাসনিক আশ্বাস দেওয়ার পরেও ওই এলাকার বাসিন্দা বীরেন্দ্রনাথ রায়ের জমিতে রাতে ও ভোর বেলায় জেসিবি দিয়েই পুকুর খননের কাজ চলছে বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জয়নুর বেওয়া চৌধুরীর বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ না হওয়ায় বক্তব্য জানা যায়নি। অভিযোগ প্রসঙ্গে সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান খাইরুল মোল্লা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “অভিযোগ পঞ্চায়েতে জমা পড়েছে। বিষয়টি পঞ্চায়েত স্তরে এবং ব্লক স্তরে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে কার্যত মুখে কুলু এটেছে কুমারগঞ্জ ব্লকের আধিকারিকরা”।
এদিন অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমারগঞ্জ ব্লকের বিডিও ছেয়াঙ তামাং এর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলে দিয়েছেন, “উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সংবাদমাধ্যমকে কিছু জানাতে পারবো না”।