সব রকম সাহায্য থেকে বঞ্চিত ত্রিপুরারীর পরিবার
রাজ খানঃ বর্ধমানঃ গতবছর আমফানে ভেঙে গেছিল ঘর। সদ্য পেরিয়ে গেল যশ। কিন্তু একবছর ধরে পঞ্চায়েত সহ বিডিও অফিসের দোরে দোরে ঘুরেও ঘর করার টাকা মেলেনি। গতবছর আমফানে বর্ধমানের গলসীর গলিগ্রামের বাসিন্দা ত্রিপুরারী মুখার্জ্জীর ঘর ভেঙে গেছে। এরপর থেকে ত্রিপুরারী মুখার্জ্জী স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কাছে গেছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের পরামর্শমত পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দরখাস্ত করেছেন। আমফানের ক্ষতিপূরণের জন্য কয়েক দফায় বিডিও অফিসেও দরবার করেছেন। কিন্তু বছর পেরিয়ে গেলেও ত্রিপুরারী মুখার্জ্জীর কোনো সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে স্ত্রী আশা মুখার্জী সহ দুই সন্তানকে নিয়ে ত্রিপুরারী মুখার্জ্জীর মায়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।
কিন্তু আশাদেবী জানান, “শাশুড়ীর ঘরে রয়েছেন। প্রতিদিন তাদের লাঞ্চনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে। এই হতদরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার একটা ছোট্ট ঘরে কোনোরকমে ঠাসাঠাসি করে প্রাণটুকু নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। একদিকে পেটের জ্বালা অন্যদিকে অপমানের জ্বালা আর সহ্য হচ্ছে না। দুটি সন্তানকে নিয়ে কিভাবে বাঁচবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। কোনো কাজ নেই। লকডাউন, করোনার জেরে সবকিছুই বন্ধ। কি কাজ করবেন? কিভাবে সংসারকে বাঁচাবেন? যেন অথৈ জলে পড়ে রয়েছেন। এমনকি ছেঁড়া জামাকাপড় পরেই কোনোরকমে লজ্জা নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিজেদের এই দুঃখ দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেছেন বারবার আশাদেবী”।
ত্রিপুরারী বাবু বলেছেন, “তিনি পুজো অর্চনার কাজ করেন। তবে গত বছর থেকে করোনা পরিস্থিতির পর আস্তে আস্তে পুজোর কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। তবুও যারা ডাকেন যাচ্ছেন, তারাই যা দিচ্ছেন তাই দিয়েই কোনোদিন শাক ভাত জুটছে তো কোনোদিন তাও জুটছে না। এভাবেই বেঁচে রয়েছেন। করোনার ভয়ে কেউ আর বাড়িতে পুজোর জন্য ডাকতে সাহস পাচ্ছেন না। ফলে বাধ্য হয়েই কার্যত দিনের পর দিন অর্ধাহারে, কোনো কোনো দিন অনাহারে শুকনো মুড়ি চিবিয়েও দিন পার করতে হচ্ছে। তাদের এই অবস্থার কথা বারবার সবাইকে জানিয়েও কোনোরকম সরকারী সাহায্য পাওয়া যায়নি”।
এদিকে আশাদেবীদের এই করুণ অবস্থার কথা শোনার পর গলসীর তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই জানিয়েছেন, “তিনি এই ব্যাপারে বিডিওর সঙ্গে কথা বলেছেন। ত্রিপুরারীবাবুদের ঘরের জন্য অনুমোদন হয়ে গেছে। খুব তাড়াতাড়ি যাতে সরকারী সাহায্য পান সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। একইসঙ্গে প্রাথমিকভাবে তারা যাতে স্বাভাবিকভাবে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারেন সে ব্যাপারেও তাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে”।