বিজেপি কর্মীর রহস্য মৃত্যু ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য
দ্বিজেন্দ্রপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ঃ বীরভূমঃ রাজ্যে চলছে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। আর এই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া চলার মাঝেই একাধিক রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বিজেপি কর্মীরা আক্রান্ত বলে অভিযোগ ওঠে। আর সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটলো মঙ্গলবার বীরভূমের দুবরাজপুর বিধানসভার অন্তর্গত লোবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ফকিরবেড়া গ্রামে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন।
মঙ্গলবার সকালে ৩০ বছর বয়সী পতিহার ডোম নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ ফকিরবেড়া গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে লক্ষ্য করা যায়। মৃত ওই ব্যক্তির এলাকার বিজেপি কর্মী বলে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব ও স্থানীয়রা দাবী করেছেন। সাতসকালে ওই কর্মীর মৃতদেহ সামনে আসতেই এলাকার বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে ওই এলাকায় একটি বিজেপির বৈঠক ছিল। সেই বৈঠক শেষ হলে পতিহার ডোম নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু রাতের খাবার খাওয়ার পর তার কাছে একটি ফোন আসে ও সেই ফোন পেয়ে তিনি বাইরে যান। এরপর আর তিনি বাড়ি ফেরেননি। সকালে তার মৃতদেহ ওই পুকুরের পাড়ে দেখতে পাওয়া যায়। মুখে এবং গলায় আঘাত ও রক্তের চিহ্ন রয়েছে বলে দাবী করেছেন স্থানীয়রা।
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অভিযোগ করছেন, “এলাকায় বিজেপির সংগঠন দিন দিন বাড়তে থাকায় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বিজেপিকে দুর্বল করার জন্য এবং এলাকায় অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করার জন্য এই খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে”।
এর পাশাপাশি স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, “পুলিশ ঘটনার পর মৃত ওই বিজেপি কর্মীর স্ত্রীকে কাউকে না জানিয়েই নিয়ে গেছে। কেন এমনটা করা হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা। এমনকি তারা এটাও অভিযোগ করেছেন, এলাকার বিজেপি বুথ সভাপতিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না”।
বিজেপি কর্মী সমর্থকরা তাদের অবিলম্বে সকলের সামনে আনার জন্য যে অ্যাম্বুলেন্স করে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। যদিও এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
যখন ওই বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন এই পরিস্থিতি আরো ভয়ানক আকার নেয়। বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়ার সময় দুবরাজপুর ব্লকের ঝাউডাঙ্গাল গ্রামে ওই অ্যাম্বুলেন্সকে আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তাদের অভিযোগ অবিলম্বে পুলিশকে দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ সহ বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। তারপরেই পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডা শুরু হয় ও এলাকায় ধুন্ধুমার কান্ড বেঁধে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট বৃষ্টি করতে শুরু করে। পাল্টা পুলিশ বিক্ষোভরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ফাটায় এবং লাঠিচার্জ করে। বিজেপির অভিযোগ এই সময় পুলিশ শূন্যে গুলি চালায়। যদিও পুলিশ কোনোরকম গুলি চালায়নি বলেই জানা যাচ্ছে। কিন্তু দুই পক্ষের এই লড়াইয়ে ২ জন পুলিশ কর্মী সহ কয়েক জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
অন্যদিকে আবার তৃণমূলের তরফ থেকে এই ঘটনার তদন্তের জন্য তরুলিয়া মোড়ে পথ অবরোধ করে। তাদের দাবী, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক তারপর দোষারোপ”।