নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বর্ধমানঃ সম্প্রতি মাফিয়ারা নকল ওয়েবসাইট তৈরী করে বালি পাচারের চালান বার করে ওই চালানের সাথে ‘কিউ আর কোড’ লিঙ্ক করে পুলিশ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের চোখে বালি দিয়ে কারবার চালাচ্ছিল। গতকাল রাতেরবেলা পুলিশ ওই চক্রের মূল মাথা সহ চার জনকে খণ্ডঘোষের দু’টি জায়গা থেকে গ্রেফতার করে এদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশের দাবী, ‘‘অভিযুক্তদের মধ্যে খণ্ডঘোষের খেজুরহাটি গ্রামের ব্যবসায়ী লায়েক আজহারউদ্দিন নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়ো চালান তৈরী করতেন। বাকি তিন জন খণ্ডঘোষের কেশবপুরের মীর আবু সিদ্দিকি, বর্ধমান শহরের লস্করদিঘির শেখ মনোজ এবং রায়নার জ্যোৎসাদির শেখ মণিরুল হোসেন এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।
আর বালি নিয়ে যেতে ই-চালান দরকার। তাতে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে দেখা হয় চালানটি আসল না নকল।’’ এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানান, “সরকারের ওয়েবসাইটের (mdtcl.wb.gov.in) আদলে একটি ওয়েবসাইট বানানো হয় (tcl.wb-gev.in)। সেখান থেকে ভুয়ো চালান বার করে প্রযুক্তির সাহায্যে আলাদা কিউআর কোডের সাথে লিঙ্ক করে দেওয়া হচ্ছিল। ফলে রাস্তায় ওই কোড স্ক্যান করলে ভুয়ো চালান দেখা যেত।’’
পুলিশ মীর, মনোজ, মণিরুল ও আজহারউদ্দিনের কাছ থেকে চারটি মোবাইল এবং বেশ কয়েকটি ভুয়ো চালান বাজেয়াপ্ত করেছেন। আজহারউদ্দিন নদী থেকে বালি তোলার পর এজেন্টের মাধ্যমে ভুয়ো চালান তৈরীর বরাত পেতেন। এরপর নকল ওয়েবসাইট থেকে ভুয়ো চালান তৈরী করে কিউআর কোডের সাথে লিঙ্ক করে তা বিভিন্ন এজেন্টদের কাছে পাঠিয়ে দিত।
![- Sponsored -](https://indianprimetime.in/wp-content/uploads/2021/02/advertisehere.png)
- Sponsored -
আসল চালান স্ক্যান করে গাড়ির নম্বর ও বৈধ তারিখ-সময় বদলে ফেলে নতুন করে কিউআর কোড তৈরী করে লিঙ্ক করা হত যা সাধারণ পুলিশ বা প্রশাসনের কর্মীদের চোখে ধরা পড়া খুবই কঠিন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, “গলসিতে অভিযানে গিয়ে এক দিনে দু’টি ভুয়ো চালান পাওয়া গিয়েছিল।’’
এছাড়া ওয়েবসাইটের নাম আর কিউআর কোডের ছাপ দেখে আসল-নকলের ফারাক ধরা পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চক্রের মূল পাণ্ডা আজহারউদ্দিন উচ্চমাধ্যমিক অবধি খণ্ডঘোষ হাইস্কুলে পড়াশোনা করে কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ নেয়। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে কম্পিউটার-অপারেটর হিসেবে বিভিন্ন সংস্থায় কাজও করেছেন।
তারপর ভুয়ো ই-চালান তৈরীর বিষয়টি জানতে পেরে তা নিয়ে পড়াশোনা করেন। এমনকি ছ’হাজার টাকা দিয়ে অস্থায়ী ভাবে ওয়েবসাইট তৈরী করে ভুয়ো চালান তৈরীর কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে মাসে একটা-দু’টো করে বরাত মিলছিল।
বর্তমানে দিনে অন্তত কুড়িটি ভুয়ো চালান তৈরীর বরাত পাওয়া যায়। প্রতিটি চালান পিছু ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হয়। জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন, “বিভিন্ন থানায় নকল চালানের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল।’’