নাচে-গানে আবীর উড়িয়ে শেষযাত্রা সম্পন্ন হলো বৃদ্ধার

Share

মিনাক্ষী দাসঃ উত্তর চব্বিশ পরগণাঃ ‘ডিজে বক্স’-এ বাজছে ‘আরে দিওয়ানো, মুঝে পহচানো, কাঁহাসে আয়া, ম্যায় হুঁ কৌন’, ‘কে বলে ঠাকুমা তোমার বয়স পেরিয়ে গেছে আশি’— একের পর এক হিন্দি এবং বাংলা গান। তাই শুনে আলপথে এসে দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামের আট থেকে আশি। ভেবেছিলেন কোনও পুজোর শোভাযাত্রা যাচ্ছে। আবির নিয়ে তাসা পার্টির দলের পিছনে উচ্ছ্বাস এবং নাচ দেখে প্রথমে কেউ ঠাওর করতে পারেননি এটা কারও অন্তিমযাত্রা। কিন্তু প্রিয় ঠাকুমার মৃত্যুকে নাচেগানে ‘উদ্‌যাপন’ করলেন উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার এক দল ‘নাতি-নাতনি’। ডিজের বাজনা, নাচ-গান, হুল্লোড়ের মধ্যে শ্মশানযাত্রা হল গাইঘাটার ডুমা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঊষারানি মণ্ডলের। আত্মীয়-প্রতিবেশীদের দাবি, ১১১ বছর বয়সে বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শেষ ইচ্ছাকে শ্রদ্ধা জানিয়েই ‘এত আনন্দ আয়োজন।’

ঊষার ছেলেমেয়ের মৃত্যু হয়েছে অনেক আগে। নাতি-নাতনিদের পরিবারে থাকতেন সদাহাস্য বৃদ্ধা। এখনও নিজের হাতে রান্নাবান্না করতেন। চলাফেরাতেও সমস্যা ছিল না। তবে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় মঙ্গলবার মৃত্যু হয় তাঁর। পরিবারের দাবি, ঊষারানির বয়স হয়েছিল ১১১ বছর। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, শেষযাত্রায় ভাড়া করা হয়েছে ডিজে, ব্যান্ড পার্টি। নাচে-গানে নাতি-নাতনি এবং পরিজনদের কাঁধে চেপে শ্মশানে যান বৃদ্ধা। ঊষার পরিবারের দাবি, মৃত্যুর আগে বিশেষ কষ্ট ভোগ করতে হয়নি বৃদ্ধাকে। দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াতেন এই বয়সে। তিনি ছিলেন আনন্দপ্রিয় মানুষ। পাড়া-প্রতিবেশী সকলের সঙ্গে ছিল সুসম্পর্ক। পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলেই গল্প জুড়তেন। কয়েক দিন আগেই নাতি-নাতনিদের ডেকে বলেছিলেন, ‘‘আমি মরে গেলে সবাই আমার মতোই আনন্দ করবি। কেউ দুঃখ করবি না।’’


অগত্যা বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ছেকাটি শ্মশানে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়ার সময় গোটা রাস্তায় উড়ল আবির। ডিজের তালে নাচতে নাচতে এক নাতি বললেন, ‘‘ঠাকুমার মতো মানুষ কম দেখেছি। দুঃখ তো হচ্ছে। কিন্তু ঠাকুমা বলে গিয়েছে। তাই দুঃখ করা বারণ।’’ সন্ধ্যা দাস নামে মৃতার এক আত্মীয়া বলেন, ‘‘এই বয়সে নিজে রান্না করতেন। আর কিছুতেই একা খাবেন না বা একা থাকবেন না। রাস্তা দিয়ে পরিচিত কাউকে যেতে দেখলেও ডেকে খাওয়াতেন। খুবই ভাল মানুষ। সব সময় আনন্দে থাকতেন। উনি বলে গিয়েছিলেন, ‘আমি মারা গেলে আনন্দ করবি। আমি আনন্দ করেই চলে যাব।’ ওঁর শেষযাত্রা হচ্ছে ওঁর ইচ্ছাতেই।’’


Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930