আজও পশ্চিমমুখী ঘটেই পুজো হয় চৌধুরী রাজবংশে

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মেদিনীপুরঃ প্রায় ৩০০ বছর আগের কথা। চৌধুরী রাজবংশের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন মা দুর্গেশ নন্দিনী। মর্ত্যলোকে তাঁর আরাধনার নির্দেশও দিয়েছিলেন। আর চৌধুরী রাজবংশ ওই মাতৃ আদেশ পেয়েই কাঁথির কিশোরনগর গড়ে দুর্গা পুজোর প্রচলন করেছিলেন। এই পারিবারিক পুজো কালের হাত ধরে সার্বজনীন হয়ে উঠেছে।

রাজত্ব, আর্থিক প্রতিপত্তি সব কিছুই চৌধুরী পরিবারের কাছে অতীত। কিন্তু তিন শতাব্দীর ইতিহাস সঙ্গে নিয়ে পুজোর রীতিনীতি ও আচার অনুষ্ঠান পরিবর্তন হয়নি। কথিত আছে, রাজবাড়ির পূর্বপুরুষ রাজা যাদবরাম রায় দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশে দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু করেন। রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য দেবজ্যোতি রায় জানান, ‘‘প্রায় ১৭২০ সালে প্রথম এই পুজো শুরু হয়।


স্বর্গীয় রাজা যাদবরাম রায় দেবী দুর্গার স্বপ্নাদেশে পুজো শুরু করেন। প্রতি বছর মহিষ বলি দেওয়া হত। প্রায় ২৬৫ বছর মহিষ বলি চালু ছিল। ১৯৮৫ সালের বন্যায় রাজবাড়ির গোশালা ভেঙে পড়ে। গোশালায় দেবীর উৎসর্গীকৃত মহিষ দেওয়াল চাপা পড়ে মারা যায়। এরপর থেকেই পশুবলি বন্ধ হয়ে যায়। আর ওই বছর থেকে পশু বলির পরিবর্তে আখ এবং চাল কুমড়ো বলি শুরু হয়।’’


এছাড়া রাজবাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে মা পশ্চিমমুখী ঘটে পূজিত হন। পশ্চিমমুখী ঘটে দেবী দুর্গার আরাধনা বাংলার আর কোথাও হয় না। রাজপরিবারের সদস্য তথা প্রাক্তন পৌর প্রতিনিধি কৃষ্ণা মিত্র চৌধুরী বলেন, ‘‘দেবীর পুজোর শুরু থেকে পশ্চিমমুখী ঘট স্থাপন হয়নি। পুজোর চার দিন দেবী মায়ের আরাধনার পাশাপাশি দেবী বন্দনা হতো। ব্রাহ্মণরা পুজোর চারদিন দেবী বন্দনার গান করতেন।’’


পুজো শুরু হওয়ার পঁচিশ বছর পর একবার এক জন জেলে সম্প্রদায়ের মানুষ এসে তখনের রাজাকে বলেছিলেন, ‘‘চলতি বছর দেবী বন্দনার গান গাইবেন। দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েই দেবী বন্দনা গান করতে এসেছেন।’’ তবে জেলে ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় রাজপরিবারের কেউ রাজি না হওয়ায় ওই জেলে ফিরে গিয়ে দুর্গা মায়ের আরাধনার সময় মায়ের মন্দিরের পেছনে বসে দেবী বন্দনার গান করেন।

গান শুরু হলে দেখা যায় মায়ের পুজোর ঘট নিজে থেকেই মন্দিরের পিছন দিকে অর্থাৎ পশ্চিমমুখী ঘুরে গিয়েছে।’’ সেই থেকে আজও পশ্চিমমুখী ঘটে এই পুজো হয়ে আসছে। রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ষষ্ঠীর দিন ঘটোত্তলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। সেদিন দেবীর চক্ষুদান করা হয়। নিয়ম মেনেই মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী সন্ধিপুজো, মহানবমী, দশমীর পুজো ও বিসর্জন হয়।

মহাষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার জন্য এলাকার মানুষজন ভিড় করে আসেন। নিয়ম মেনেই একশোটি প্রদীপ জ্বালিয়ে সন্ধিপুজো করা হয়। দেবীকে কাজু বাদাম দিয়ে হাতে তৈরী এক প্রকার সন্দেশ ভোগ দেওয়া হয়। এই সন্দেশ ভোগ কাঁথির আর কোনো পুজোতে দেওয়া হয় না। সন্দেশ প্রসাদ লাভের জন্য প্রচুর মানুষ জমায়েত হন। বর্তমানে এই বিশেষ ভোগের জন্য টিকিটের ব্যবস্থা শুরু হয়েছে।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031