ছৌ নাচকে ধ্রুপদী তকমা দিতে এবার কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি

Share

চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ বাংলা ভাষার পরে এবার ছৌ নাচকে ধ্রুপদী তকমা দেওয়ার জন্য বিজেপি কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের দ্বারস্থ হতে চলেছে। এই বিষয় নিয়ে দলে আলোচনাও হয়েছে। লোকসভায় আগামী বাজেট অধিবেশনে বিজেপির এক জন সাংসদ এই বিষয়টি উত্থাপন করতে চলেছেন। এককথায়, রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব সরাসরি ছৌ নাচ নিয়ে দিল্লিতে দরবার করতে চলছেন।

সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছিলেন সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য থাকা সত্ত্বেও ছৌ নাচকে ধ্রুপদী নাচের মর্যাদা দেওয়া হয়নি কেন? গতকাল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক লিখিত জবাবে জানায়, ‘এটা সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে থাকা একটি সংস্থা যা স্বশাসিত সেই সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমী এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ছৌ নাচ সহ বিভিন্ন পরম্পরাগত শিল্পকলার সংরক্ষণ এবং প্রসারে ভারত সরকার যে অঙ্গীকারবদ্ধ সে কথাও আলাদা উল্লেখ করা হয়েছে।’ যে জেলায় ছৌয়ের জন্ম, সেই পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো জানান, ‘‘কোনো নির্দিষ্ট উৎসবের সাথে ছৌয়ের সম্পর্ক নেই।’’


ছৌ নাচের ধ্রুপদী মর্যাদা পাওয়া উচিত কিনা, তা নিয়ে নৃত্যশিল্পী তথা বিশেষজ্ঞদের নানা মত। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাক্তন ডিন (এবং কত্থক শিল্পী) অমিতা দত্ত বলেন, ‘‘এখনো ছৌ নাচ যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ধ্রুপদী তকমা দেওয়া যায় না। ছৌয়ের মধ্যে কিছু সুন্দর ভঙ্গি রয়েছে, যা ধ্রুপদীর (ক্লাসিক্যাল) সাথে মেলে। কিন্তু শুধু সেটুকুতেই একটা শিল্পরীতিকে ধ্রুপদী বলে দেওয়া যায় না। ধ্রুপদী তকমা পেতে হলে ছৌ-কে আরো বেশ কিছুটা পথ অতিক্রম করতে হবে। কত্থক, ভরতনাট্যম, মণিপুরি, কথাকলি, ওড়িশি সহ আমাদের যেসব ধ্রপদী নৃত্যরীতি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু মিউজিক সিস্টেম রয়েছে।


অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কিছু বাদ্যযন্ত্র, সুরের একটা ধাঁচ, সেসব বাজানোর রীতি ইত্যাদি। আর নিজস্ব কিছু সাহিত্য (বডি অফ লিটারেচার) রয়েছে। যার উপর নির্ভর করে ওই নাচের জন্য একটা নৃত্যনাট্য লেখা হবে। ছৌয়ের এখনও তেমন কোনো ‘মিউজিক সিস্টেম’ বা ‘বডি অফ লিটারেচার’ নেই।’’ পাশাপাশি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সোমনাথ সিংহ বলছেন, ‘‘পৃথিবীর যেকোনো লোকশিল্প বা লোকসংস্কৃতি তার গায়ে লেগে থাকা মাটির গন্ধে চেনা যায়। মাটির সাথে তার সরাসরি যোগ থাকবে। ফসল কাটার উৎসব বা কোনো ধর্মীয় উৎসবের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে যেসব শিল্পরীতি আবর্তিত হয়, সেগুলো লোকশিল্প। ছৌ শুধুমাত্র কোনো সামাজিক বা ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বেঁচে নেই। তাই তাকে লোকনৃত্য বলা যাবে না। অতএব ছৌ যেখানে আছে, যেমন আছে, ভালোই আছে। ছৌ নিজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আছে। ফলে জোর করে ধ্রুপদী করার চেষ্টা না হওয়াই উচিত।’’


Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
November 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930