স্বাস্থ্যসাথী কার্ডকে SIR এ নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র করার দাবী রাজ্যের

Share

অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ SIR এ এবার নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র হিসাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডকে গণ্য করার দাবী জানিয়ে মুখ্যসচীব মনোজ পন্থ নির্বাচন কমিশনকে চিঠি করেছেন। গত মঙ্গলবারই নির্বাচন কমিশনের কাছে এই চিঠি পৌঁছেছে। মুখ্যসচীবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনটি কার্ড অর্থাৎ স্বাস্থ্য সাথী, রেশন ও আধার কার্ডকেও নাগরিকত্বের প্রমাণের নথির তালিকায় যুক্ত করতে হবে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই SIR এর তালিকায় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ১১ টি নথি রয়েছে।

অতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নাগরিকত্বের নথির তালিকায় ১২ নম্বর হিসাবে আধার কার্ডকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সেটি বিহারের বিশেষ একটি মামলার প্রেক্ষিতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও রাজ্য সরকারের বক্তব্য, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে যাতে এই তিনটি কার্ডকেও যুক্ত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এ রাজ্যের সমস্ত বাসিন্দাকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের যুক্তি, সমস্ত তথ্য যাচাই করেই এই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেওয়া হচ্ছে। বাংলার কোনও বাসিন্দার যাতে ভোটার কার্ড পেতে অসুবিধা না হয়, সেই কারণেই বঙ্গ সরকারের এই পদক্ষেপ।

যাবতীয় এই আর্জি আপাতত CEO দফতরের পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে যখন সিদ্ধান্ত জানানো হবে, তখনই স্পষ্ট হবে, রাজ্যের এই আর্জি কতখানি মানা হচ্ছে। বিহারে SIR এ ৬৫ লক্ষ নাম বাদ যায়। একাধিক মামলাও হয় নিম্ন ও শীর্ষ আদালতে। এই আগে বিহারের SIR-এর ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার দীর্ঘ শুনাতি চলে। তাতে দেখা গিয়েছে, কমিশনের আইনজীবী জোর সওয়াল করেছিলেন, কোনওভাবেই আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হবে না। সেখানে আদৌ স্বাস্থ্য সাথী কার্ড কিংবা রেশন কার্ড কতখানি গণ্য হবে, সেটাই দেখার।


স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়টাকে নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “রাজ্য সরকার ভীষণভাবে ভয়ে রয়েছে। তারা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়েছে। তাদেরকে রেশন কার্ড, আধার কার্ড বানিয়ে দিয়েছে। যেভাবে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড বানিয়ে ফেলা হচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড বার করা তো বাঁ হাতের খেলা! স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড কোনওভাবেই নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না।” কিন্তু এবার বাংলায় যখন জোরাল হচ্ছে, পুজোর পরেই SIR, তখন নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডকেও যুক্ত করার আর্জি জানাল রাজ্য।

বিহারের পর এবার সারা দেশেই SIR চালু করার পথে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই কমিশনের তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,  আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে সব রাজ্যকে। অক্টোবরে এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতে পারে। তারপরই শুরু হতে পারে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। তবে নির্দিষ্ট করে কোনও দিনক্ষণ এখনও জানায়নি কমিশন। বুধবার সব রাজ্যের CEO-দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জাতীয় মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার। এই বৈঠকেই সমস্ত CEO-দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।


পাঁচ রাজ্য—পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অসম, কেরল ও পন্ডিচেরি—আগামী বছরে ভোট, ফলে এই রাজ্যগুলিতে এসআইআর আগে চালু হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বাংলায় SIR চালু হলে, প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু পুজোর পর বাংলায় যখন SIR শুরু হওয়ার জল্পনা, তখন স্বাস্থ্য সাথী কার্ডকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করার আর্জি জানাল রাজ্য। যদিও এ আভাস বুধবারই উত্তরবঙ্গ যাওয়ার আগে দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, এপিক কার্ড বা ভোটার কার্ডকেও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা উচিত।


Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
October 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031