বিজেপিতে যোগ দিয়ে ঘরের ছেলেরা ফিরলো ঘরে

Share

মিনাক্ষী দাসঃ উত্তর চব্বিশ পরগণাঃ ঘরের মানুষ ফিরল ঘরে। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী। দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতর থেকে বিজেপির উত্তরীয় পরেন তাঁরা। সাংবাদিক বৈঠক করে এই দুই নেতাকে বরণ করে নিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অর্জুন জানান, তিনি তাঁর দলের কর্মীদের তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ হাত থেকে বাঁচাতেই দলবদল করেছিলেন।

বিজেপির উত্তরীয় পরে অর্জুন বলেন, ‘‘২০১৯-এ আমি সাংসদ হয়েছিলাম। ২০২১-এ বাংলায় যে ভোট-পরবর্তী হিংসা হয়েছে, তা সকলে দেখেছেন। ৫০এর বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। আমার কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিপীড়িত হয়েছেন। দলের কর্মীদের বাঁচানোর জন্য আমাকে সাময়িক সময়ের জন্য দলবদল করতে হয়েছিল। আর সন্দেশখালির ঘটনার পর আমি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছি। কারণ মহিলাদের উপর ওই অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারিনি। প্রশাসন এবং গুণ্ডা একসঙ্গে অপরাধ করেন বাংলায়।’’


বিজেপিতে গিয়ে তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু বলেন, ‘‘আজ আমার জন্য শুভ দিন। আমি বিজেপি পরিবারের সদস্য হলাম। আমাদের নেতা মোদীজি সারা দুনিয়ার নেতা। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি এই দলে যোগ দিয়েছি।’’ সুকান্ত মজুমদার, দাদা শুভেন্দু অধিকারীকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন দিব্যেন্দু।


সন্দেশখালির প্রসঙ্গ টেনে দিব্যেন্দু আরও বলেন, ‘‘আমরা মা দুর্গা, মা কালীর পুজো করি। সন্দেশখালিতে মহিলাদের সঙ্গে যা হয়েছে, নিন্দা করার ভাষা নেই। সন্দেশখালি এখন সারা দেশের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিজেপি ওখানকার নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে মহিলাদের সম্মান করা যায় না। মমতার দল বাংলার মহিলাদের সম্মান করতে ব্যর্থ হয়েছে। মোদীজিকে ৪০০ পার করানোর লক্ষ্য আমি কাজ করব।’’

দিব্যেন্দু এবং অর্জুনকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়ে অমিত মালব্য বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যে ভাবে বিজেপিতে ওঁরা যোগ দিলেন, তাতে বোঝা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সন্দেশখালির ঘটনায় পীড়িত হয়েছেন এই দুই সাংসদ। তাই তাঁরা আমাদের দলে যোগ দিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের সদস্যেরা দুর্নীতিগ্রস্ত। অনেক মন্ত্রী দুর্নীতির দায়ে জেল খাটছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বাংলায়। যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে শান্তি ফেরাতে চান, তাদের আমরা বিজেপিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।’’


দিব্যেন্দু এবং অর্জুনের বিজেপিতে যোগদানকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। কুণাল ঘোষ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘বিজেপি নেতারাই বিজেপিতে যোগ দিলেন। এ আর এমন কী ব্যাপার?’’ শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু প্রসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘পরিবারতন্ত্রের’ অভিযোগকেও উস্কে দিয়েছেন কুণাল। উল্লেখ্য, খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ হলেও দিব্যেন্দু দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপি ঘনিষ্ঠ। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের সম্পর্ক নেই। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন শুভেন্দুর ভাই। তবে অর্জুনের বিষয় কিছুটা ভিন্ন।

২০১৯ সালে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে জিতে সাংসদও হন। তবে তার পরে আবার তৃণমূলে ফিরেছিলেন। যদিও খাতায়কলমে তিনি বিজেপির সাংসদই ছিলেন। গত ১০ মার্চ ব্রিগেড সভামঞ্চ থেকে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করে তৃণমূল। সেই মঞ্চে অর্জুনও ছিলেন। মনে করা হয়েছিল, ব্যারাকপুর কেন্দ্র থেকে তাঁকে টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু তৃণমূলের তরফে ব্যারাকপুরের প্রার্থী হিসাবে পার্থ ভৌমিকের নাম ঘোষণা করা হয়। এর পরেই ক্ষোভ উগরে দেন সাংসদ। অর্জুন স্পষ্টই জানান, তাঁকে লোকসভার টিকিট দেওয়া হবে, এই আশ্বাস দিয়েই তৃণমূলে আনা হয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হয়েছে। এর পরেই দলবদলের সিদ্ধান্তের কথা জানান অর্জুন।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
August 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031