‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না,’ নির্দেশ হাইকোর্টের

Share

অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান বা সেমিনারে আর কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। আদালতের নির্দেশ, পড়াশোনার বিষয় ছাড়া অন্য এমন কোনও অনুষ্ঠান বা সেমিনারের আয়োজন করা যাবে না বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে হলফনামা চেয়েছে আদালত।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সম্প্রতি হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে। আদালত জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কী কী পদক্ষেপ করেছেন, তিন সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিয়ে তা জানাতে হবে। একই সঙ্গে উল্লেখ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সুস্থ এবং স্বাভাবিক রাখতে কর্তৃপক্ষ কী করেছেন।


আদালতের নির্দেশ, পড়াশোনার বিষয় ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তির উপস্থিতিতে কোনও ধরনের অনুষ্ঠান বা সেমিনার করা যাবে না যাদবপুরে। উল্লেখ্য, কিছু দিন আগে যাদবপুরে তৃণমূলের অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে তিনি বিক্ষোভের সম্মুখীন হন। তাঁর গাড়ি আটকে ছাত্রভোটের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। অভিযোগ, ব্রাত্যের গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়া হয়েছিল। তাতে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির কাচ ভেঙেছে এবং তিনি জখম হয়েছেন।


বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, ব্রাত্যের গাড়ির ধাক্কায় কয়েক জন ছাত্র জখম হয়েছেন। এই ঘটনার পরেই যাদবপুরের নিরাপত্তা নিয়ে মামলা হয় হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার মামলাকারীর আইনজীবী আদালতে জানান, বার বার নানা কারণে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তার পরেও কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেন না। বার বার বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন পুলিশের সহযোগিতা চান না? প্রশ্ন তুলেছে আদালত।


প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, গত কয়েক বছরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ে একাধিক এফআইআর দায়ের হয়েছে। তার পরেও ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশি সহযোগিতা চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন করেননি। কেন করেননি, তা বোধগম্য নয়। পরবর্তী শুনানির দিন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রীর নাম না করেও আদালত তাঁর বিষয়ে পর্যবেক্ষণ রেখেছে। কেন ব্রাত্য যাদবপুরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন, প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের বক্তব্য, সম্প্রতি শাসকদলের এক নেতা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে তাঁর গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি যদি খারাপ হয়, তবে কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন? এর ফল তো বিপরীত হতে পারত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত পড়াশোনার বিষয় ছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে সেমিনার নিষিদ্ধ করল আদালত। নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের হলফনামা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুনে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তো আলাদা কোনও দ্বীপরাষ্ট্র নয়। এমন কোনও মানুষ আছে, যিনি অরাজনৈতিক? এর পর তো বলা হবে, ছাত্রেরাও থাকতে পারবে না! মাস্টারমশাইরা থাকতে পারবেন না। আমার ধারণা, আদালত বলতে চেয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না, যে ভাবে ব্রাত্য বসু গিয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ ভাবে মানুষ মাত্রেই রাজনৈতিক। ব্রাত্য মন্ত্রী হয়ে যাননি, তৃণমূলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন গন্ডগোল পাকানোর জন্য। ওঁকে যেতে দেওয়া উচিত নয়।’’

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031