বাপি রায়ঃ কলকাতাঃ দেখতে দেখতে প্রখ্যাত গায়ক কেকের মৃত্যুর তিন দিন কেটে গেলেও কেকের এই আচমকা মৃত্যু কেউই মেনে নিতে পারছে না। নজরুল মঞ্চের প্রচণ্ড ভিড় ও গরম কি কেকের মৃত্যুর আসল কারণ? কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন অন্য কথা।
কেকের শারীরিক সমস্যা এক দিনের নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই দেখা গেছে যে, আগে থেকেই কেকের হৃদ্যন্ত্রে মারণরোগ বাসা বেঁধেছিল। হৃদ্পিণ্ডের চারপাশে পুরু মেদের আস্তরণ পড়ে সাদা হয়ে গিয়েছিল। হৃদ্পিণ্ডের মোড়ক খুলতেই কপাটিকাগুলি অস্বাভাবিক রকম শক্ত হয়ে রয়েছে দেখা যায়।
এছাড়া কেকের শরীরে ১০ রকম হজমের ওষুধ ও ভিটামিন সি পাওয়া গিয়েছে। হজমের সমস্যার জন্য নিয়মিত অ্যান্টাসিড এবং গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতেন। রক্তেও এর নমুনা পাওয়া গিয়েছে। পাকস্থলীতে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি সহ আয়ুর্বেদিক ওষুধেরও হদিশ পাওয়া গেছে।
চিকিৎসকদের অনুমান, কেকের ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের’ কারণেই মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফল ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ট প্রিভেনশন অনুসারে, এটি হৃদ্পিণ্ডের পেশির একটি অংশ যা অনেক সময় পর্যাপ্ত রক্ত পায় না। কিন্তু রক্তপ্রবাহ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে যত দেরী হয় ততই হৃদ্পিণ্ডের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে করে।
এর লক্ষণগুলি হলো- বুকে ব্যথা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট, চোখে অন্ধকার দেখা, অত্যধিক ক্লান্তি বোধ, ঘাড়ে ও তলপেটে ব্যথা হওয়া। মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির অন্যতম কারণ স্থূলতা, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এবং ধূমপানের প্রবণতা এই রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কোনো মানসিক চাপও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। কেকের মৃত্যুর কারণ আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে কেকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নমুনা হিস্টোপ্যাথলজিকাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
হিস্টোপ্যাথোলজি হলো কোষের বিশদ পরীক্ষা। যেখানে যাবতীয় অস্বাভাবিকতা ও ব্লক জনিত ত্রুটি খতিয়ে দেখা যাবে। তাঁর হৃদ্পিণ্ডের যে চেহারা ধরা পড়েছে তা স্বাভাবিক নয়। কোথায় কোথায় ধমনীর পথ আটকে গিয়েছিল তা বিস্তারিত ভাবে জানতে হবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩১ শে মে অর্থাৎ মৃত্যুর দিন সকালবেলা কেকে ম্যানেজারকে বলেছিলেন, ‘‘শরীরে জোর পাচ্ছেন না।’’ আর স্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘‘কাঁধ এবং বাহু কনকন করছে।’’ এরপর অসুস্থ অবস্থাতেই অনুষ্ঠান করেন।
তারপর অনুষ্ঠান শেষে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হোটেলে ফিরে সোফায় বসতে গিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে যেতেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।