জেনে নিন কালীপুজোর আগের দিনকে ‘ভূত চতুর্দশী’ বলা হয় কেন?

Share

নিউজ ডেস্কঃ শাস্ত্র অনুযায়ী মহালয়ায় যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও জল দান করা হয় তেমনই কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে অর্থাৎ কালীপুজোর ঠিক আগের দিন পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানোর বিধান রয়েছে। বাঙালী হিন্দুদের কাছে এই তিথি ‘ভূত চতুর্দশী’ আর পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতের একাংশে এই তিথি ‘নরক চতুর্দশী’ বলে পরিচিত।

পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। তাই বাঙালীর ‘ভূত চতুর্দশী’ ও পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতের একাংশে ‘নরক চতুর্দশী’। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এই দিনটি দিওয়ালী, রূপ চৌদাস, নরকা চৌদাস, নরকা পুজা বা রূপ চতুর্দশী নামেও পরিচিত।


কোথাও কোথাও এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ ও যমরাজের পুজো করা হয়। অনেকেই এই তিথিতে দীর্ঘজীবন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্দেশ্যে যমরাজের পুজো করেন। আর ভূত চতুর্দশী পালনের একটি বিশেষ রীতি হলো বাড়িতে চোদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো। প্রাচীন শাস্ত্র, পুরাণ ও কল্পকথা অনুসারে এই রীতির নেপথ্যে নানাবিধ কারণ রয়েছে।


যেমন- একটি হলো- কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে দেবী চামুণ্ডা চোদ্দ জন প্রেত অনুচরকে সঙ্গী করে অশুভ শক্তির বিনাশ করেন। অন্য মত অনুসারে, এদিন স্বর্গ-নরকের দ্বার কিছুক্ষণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেই দরজা দিয়ে পিতৃকুল এবং মাতৃকুলের চোদ্দ পুরুষের পরলোকগত আত্মারা মর্ত্যে গৃহস্থের বাড়িতে ফিরে আসেন।


এছাড়া ভূত-প্রেত-পিশাচ থেকে বাঁচতে, অতৃপ্ত আত্মাদের অভিশাপ থেকে বাঁচতে ও নেগেটিভ এনার্জি অথবা অশুভ শক্তিকে বাড়ি থেকে তাড়াতেই চোদ্দটি প্রদীপ জ্বালানো হয়। আর এই তিথিতেই রাজা বলি অসংখ্য অনুচর সহ ভূত-প্রেত নিয়ে মর্ত্যে পুজো নিতে নেমে আসেন। বলি রাজা এবং পূর্বপুরুষের প্রেতাত্মা ছাড়াও এদিন নানান বিদেহী আত্মারা মর্ত্যলোকে নেমে আসে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, শ্রীবিষ্ণুর ভক্ত প্রহ্লাদের পৌত্র দৈত্যরাজ বলি সাধনবলে শক্তি অর্জন করে স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল জয় করে ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন। এমনকি দেবতারাও তাঁর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছিলেন না। বলি স্বর্গরাজ্য দখল করে দেবতাদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

এমত অবস্থায় দেবতারা শ্রীবিষ্ণুর দ্বারস্থ হলে শ্রীবিষ্ণু বামন রূপ ধারণ করে আবির্ভূত হয়ে তার কাছে নিজের চরণ রাখার জায়গা ভিক্ষা চাইলে বলিও ভিক্ষা দিতে রাজি হলেন। এরপর শ্রীবিষ্ণু দু’পা দিয়ে স্বর্গ-মর্ত্য দখল করে নিলেন। আর তৃতীয় পা কোথায় রাখবেন তা জিজ্ঞাসা করা মাত্র বলি প্রতিশ্রুতি রক্ষায় নিজের মাথা পেতে দিলেন বামন অবতারের চরণে।

তারপর শ্রীবিষ্ণু তার মাথায় পা রেখে বলিকে পাতালে প্রবেশ করান। তখন থেকে ওই থেকে পাতালই বলির আবাস হলো। তবে তার এই আত্মাহুতি দেখে শ্রীবিষ্ণু বলিকে অমরত্ব প্রদান করেছিলেন। আর বছরে একটি দিন ভূত-প্রেতাত্মা-পিশাচ-অশরীরীর সাথে এই পৃথিবীতে আসার অনুমতি দেন। আর ওই দিনটিই হলো ভূত চতুর্দশী।

এর পাশাপাশি এইদিন যম দীপ দান করার বিধান রয়েছে। অর্থাৎ এদিন কাল, চিত্র, দধ্ন, নীন, মৃত্যু, অন্তক, উড়ুম্বর, চিত্রগুপ্ত, যমমৃত্যু, ধর্মরাজ, বৈবস্বত, বৃকোদর, পরমেষ্ঠী ও সর্বভূতক্ষয় সহ যমলোকের এই চোদ্দ জনের উদ্দেশ্যে তর্পন করার রীতিও প্রচলিত রয়েছে।

DISCLAIMER: This channel does not promote any violent, Harmful or illegal activities. All content provided by this channel is meant for an educational purpose only.

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031