কাদা থেকে উঠে এসে শেষমেশ ইডির হাতে ধরা দিতে হলো জীবনকৃষ্ণকে

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মুর্শিদাবাদঃ প্রায় মিনিট পনেরোর ছোটাছুটি, কাদা মাখামাখির পর অবশেষে রণে ভঙ্গ দিলেন বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। দু’হাত উপরে তুলে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। সাদা গেঞ্জিতে চপচপ করছে কাদা। প্যান্ট সম্পূর্ণ ভিজে গিয়েছে। চোখেমুখে বিরক্তি, আতঙ্কও। তত ক্ষণে তাঁর কাছে পৌঁছে গিয়েছেন দুই ইডি অধিকারিক। দু’দিক থেকে দু’হাত চেপে ধরেছেন। এ বার বাড়িতে নিয়ে আসার পালা।

বছর দুয়েক আগে তিনি সিবিআইকে দেখে পর পর দু’টি মোবাইল অবলীলায় পুকুরে ফেলে দিয়েছিলেন। এ বার পকেট থেকে বার করে মোবাইল ছুড়়ে দিলেন নর্দমায়। নিখুঁত লক্ষ্য! অনেকে অবশ্য বলছেন, এ বার ফোন ফেলেননি জীবনকৃষ্ণ। বরং দৌড়তে গিয়ে কাদায় এমন হোঁচট খেয়েছেন যে, পকেট থেকে ছিটকে মোবাইল নিজেই গিয়ে পড়েছে নর্দমায়। তা যাক। কী ভাগ্যে নর্দমা ছিল পরিত্যক্ত! তাই এ যাত্রায় ইডিকে আর তেমন পরিশ্রম করতে হল না। কিছু ক্ষণের খোঁজাখুঁজিতেই মোবাইলের হদিস মিলল। সিবিআইকে তো পুকুর ছানতে হয়েছিল!

সোমবার সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ মুর্শিদাবাদের কান্দির আন্দি গ্রামে জীবনকৃষ্ণের বাড়ির সামনে পৌঁছোয় ইডির গাড়ি। কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রথমেই বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। পাঁচ ইডি কর্তা ডাকাডাকি শুরু করেন। সূত্রের খবর, ইডি এসেছে, প্রথমে বুঝতে পারেননি জীবনকৃষ্ণ। হাঁক়ডাক শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে বলছেন, জীবনকৃষ্ণ ভেবেছিলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের গুন্ডাবাহিনী সকাল সকাল তাঁর বা়ড়িতে হানা দিয়েছে। প্রাণভয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি। উঠে পড়েন পাঁচিলে। আগন্তুকদের দর্শনের জন্য অপেক্ষা না করেই দেন লাফ! তার পর রুদ্ধশ্বাস ছুট।


বাড়ির পিছনের দিকের রাস্তা দিয়ে ছুটতে ছুটতে প্রায় ১০০ মিটার চলে গিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। তাঁকে তাড়া করেন ইডি আধিকারিক এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। ছুটোছুটি দেখতে আট-সকালেও রাস্তার দু’পাশে লোকজন জড়ো হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ‘তামাশা’ বেশি ক্ষণ স্থায়ী হল না। কাদায় হোঁচট খেয়েই রণে ভঙ্গ দিতে হল বিধায়ককে। পিছন থেকে এত ক্ষণ হয়তো মারধরের হুমকি আসছিল। পড়ে গিয়ে কাতর আর্তি করে উঠলেন জীবনকৃষ্ণ, ‘‘মারবেন না, আমাকে মারবেন না।’’

রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়েই তৃণমূল বিধায়ককে তাঁর বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছিল কেন্দ্রীয় সংস্থা। কিছু ক্ষণ পরে মোবাইলের অনুপস্থিতি বোঝা যায়। তার পর আবার কয়েক জন গিয়ে নর্দমা থেকে সেটি খুঁজে আনেন। সূত্রের খবর, দু’টি মোবাইলের পাসওয়ার্ড ই়ডিকে বলতে চাননি জীবনকৃষ্ণ। নিজেও ফোন খুলে দিতে চাননি। ফোন দু’টি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। জীবনকৃষ্ণের বেশ কিছু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, নথি, লেনদেন ইডির নজরে ছিল। সে সব নিয়ে টানা চার ঘণ্টা তাঁকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ফোনের কল রেকর্ডিং ধরে ধরেও প্রশ্ন করা হয়।


কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন, কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে যান জীবন। জবাবে বার বার অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সমান্তরালে জীবনকৃষ্ণের গাড়িচালক রাজেশ ঘোষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। তাঁকে নিয়ে তাঁর বাড়িতে যান আধিকারিকেরা। সেখানে বেশ কিছু ক্ষণ তল্লাশি চলেছে। বেলা ১২টা ৩৫ মিনিট নাগাদ ইডি জীবনকৃষ্ণকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলে। সোমবারই তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। প্রথমে কলকাতার হাসপাতালে হবে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষা। তার পর তাঁকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করিয়ে হেফাজতে চাইবেন তদন্তকারীরা।

ইডি-তল্লাশির সূত্রে সোমবার জীবনকৃষ্ণের এক পিসির নামও শিরোনামে উঠে এসেছে। বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহা জীবনকৃষ্ণের পিসি। তাঁর বাড়িতেও সাতসকালে হানা দিয়েছিল ইডি। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে জীবনকৃষ্ণের শ্বশুরবাড়ি। ইডির একটি দল গিয়েছিল সেখানেও। এর আগে সিবিআইয়ের মামলায় ১৩ মাস জেল খেটেছেন জীবনকৃষ্ণ।


Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930