নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ঝাড়গ্রামঃ সাইকেল সারানোর মিস্ত্রি থেকে বড়ো ব্যবসায়ী। কুঁড়েঘর থেকে আজ প্রাসাদপ্রম তিনতলা বাড়ি। বালি কারবারে যুক্ত হয়ে রাতারাতি ভাগ্য ফেরায়। কিন্তু হঠাৎ এহেন উত্থানের পরই দাপট বাড়তে থাকে। আর ঝাড়গ্রামের শেখ জাহিরুল কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের নজরে পড়লেন।
গতকাল ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর থানার নয়াবসান গ্রামের শেখ জাহিরুল আলির বাড়িতে ইডির দল হানা দেয়। জানা গিয়েছে, বেশ মোটা অঙ্কের টাকা উদ্ধার হয়েছে এই অভিযানে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জাহিরুলরা তিন ভাই। বড় দাদা কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় মারা যান। সেই চাকরি পায় তাঁর ছোটভাই। জাহিরুল একটি টিনের শেড দেওয়া ছোট্ট সাইকেল দোকানে যন্ত্রাংশ সারাইয়ের কাজ করতেন। পুলিশের কাজ বালির টাকার কাছে তুচ্ছ ছিল। সেই কাজ ছেড়ে পুরোপুরি বালি ব্যবসায় যুক্ত হন জাহিরুল। সেটা ছিল ২০১৪ সাল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাগ্য পরিবর্তন হতে থেকে। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন। পাশাপাশি থানাগুলিতে পুলিশের সঙ্গে অবাধে ওঠাবসা শুরু হয়। কলকাতার একটি বালি মাইন সংস্থার (জিডি মাইনস) সঙ্গে বালিখাদান গুলিতে শেয়ার নিয়ে ব্যবসাও শুরু করেন।
এরপর আর্থিকভাবে ফুলেফেঁপে উঠতে থাকে। স্থানীয়দের দাবি, সন্ধ্যার পরই বাড়ি থেকে ব্যবসার জন্য বেরিয়ে যেতেন তিনি। দিনে ঘুম, রাতে কারবার চলত। কলকাতার ওই সংস্থার সঙ্গে মোটা টাকার লেনদেনের বিষয়টি ইডির নজরে এনে দেয়। কয়েক বছরের মধ্যে নিজের কুঁড়েঘরটিকে ঝাঁ-চকচকে তিনতলা বাড়িতে পরিণত হয়। জাহিরুলের এই বেআইনি ব্যবসার সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ মহলে তাঁর এতটাই দহরম-মহরম যে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও একটি থানার ওসিকে গাড়ি কিনে দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন জাহিরুল!
Sponsored Ads
Display Your Ads Here
জানা গিয়েছে, গোপীবল্লভপুর ১ এবং গোপীবল্লভপুরে দুই ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে চারটি বৈধ খাদান আছে। অভিযোগ, বালি তোলার বৈধ জায়গার পরিবর্তে রাতের অন্ধকারে অন্য চর থেকে বালি তোলা হত এবং ভুয়ো সিও এবং গাড়িতে নকল নম্বর প্লেট লাগিয়ে বালি পাচার করা হত। যা কিনা কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার হয়ে যেত। তার সব বালি খাদানগুলিতে বিরাট প্রভাব। বিপুল অর্থ উপার্যনের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতাদের সাথে জাহিরুলের ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে তুঙ্গে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে যে কোনও সমস্যা ‘টাকা দিয়ে’ নিমেষে সমাধান করতেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
এনিয়ে গোপীবল্লভপুর এক ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হেমন্ত ঘোষ বলেন, “জাহিরুল দলের কোনও পদে ছিল না। সে তৃণমূলের সমর্থক। ২০১৪ সাল থেকে অনেকের মতো সেও শেয়ারে বালি ব্যবসা করতে। কোথায় কে দুর্নীতি করেছে, সেটা বলা সম্ভব নয়।” ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএম সম্পাদক প্রদীপ কুমার সরকারের বক্তব্য, “ইডির এই ধরনের অভিযান আরও নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন। এক শ্রেণির নব্য ধনী তৈরি হয়েছে। এরা সারাসরি শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত। উদ্ধার হওয়া টাকা যাতে গরিব মানুষের কাজে লাগানো যায় সেটা দেখা প্রয়োজন।”
Sponsored Ads
Display Your Ads Here