চয়ন রায়ঃ কলকাতাঃ আজ পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট শাসনের দ্বিতীয় তথা শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জীবনাবসান ঘটলো। মৃত্যুকালীন বয়স ৮০ বছর হয়েছিল। ২০০০ সাল থেকে ২০১১ সাল অবধি টানা এগারো বছর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এদিন এই মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য জানান।
জানা গেছে, এদিন সকালবেলা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্রাতঃরাশ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর সকাল ৮টা ২০ মিনিটে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুচেতন খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছেছেন। সূত্রের খবর, গতকাল রাতে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্বাসকষ্ট বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গিয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবে তা আয়ত্তে আনা হয়েছিল। আর তখনই ঠিক করা হয়েছিল, এদিন বেলা ১১টা নাগাদ তাঁকে উডল্যান্ডসের চিকিৎসকেরা এসে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করানো হবে।
তবে এদিন সকালবেলা আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে নেবুলাইজার দেওয়ার চেষ্টা হয়। আর সেই সময়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন। এরপর চিকিৎসকদের খবর দেওয়া হলে তারা এসে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি কিভাবে হবে, তা নিয়ে সিপিএম রাজ্যনেতৃত্ব আলোচনায় বসবেন। তিনি পলিটব্যুরোর সদস্য থাকায় দিল্লির নেতাদেরও শেষযাত্রায় একটা ভূমিকা থাকবে। আপাতত পাম অ্যাভিনিউয়ের দু’কামরার ফ্ল্যাটেই মরদেহ রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় (সিওপিডি) ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে শেষ কয়েক বছর কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন। আগেও একাধিক বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময়েও কয়েক দিন ভেন্টিলেশনে ছিলেন। সেখান থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন। এছাড়া ২০২১ সালের মে মাসের মাঝামাঝি করোনা আক্রান্ত হন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৮ ই মে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
একই সময় স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্যও করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় একই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে দু’জনেই নেগেটিভ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। আবার, গত বছর ৯ ই আগস্ট বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হাসপাতাল থেকে বিপন্মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। তারপর ২৯ শে জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। বেশ কয়েক দিন ভেন্টিলেশনের সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত থাকায় ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে মারাত্মক সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথম কয়েক দিন মূলত আচ্ছন্ন অবস্থাতেই ছিলেন। পরে ক্রমশ চিকিৎসায় সাড়া দেন। এরপর বারো দিনের মাথায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে ফিরেও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রাখা হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ২০২২ সালের ২৫ শে জানুয়ারী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পদ্মভূষণ সম্মান প্রত্যাখ্যান করে।