অবিরাম বৃষ্টির জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে চাষবাস

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গতকাল মধ্যরাতেরবেলা ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ওড়িশার স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে। আর আজ সকালে ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তবে উপকূলে ঝড়ের দাপট থাকলেও দক্ষিণবঙ্গে ঝড়ের প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু গতকাল রাতেরবেলা থেকেই অনেক জেলায় ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেক জেলায় সকালবেলা থেকেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে কৃষকদের মাথায় হাত। বহু চাষের জমি জলের তলায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা।

কৃষকদের কথায়, ‘‘এই অতিরিক্ত বৃষ্টি ধান এবং শীতকালীন ফসলে প্রভাব ফেলতে পারে। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর চব্বিশ পরগণা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় চাষের ক্ষতি বেশী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই অতিরিক্ত বৃষ্টি। উত্তর চব্বিশ পরগণার বসিরহাটের বাদুড়িয়া এলাকার অধিকাংশ চাষের জমিতে জল জমেছে। বৃষ্টি না কমায় জলের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে শীতকালীন ফসলের চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।


বাদুড়িয়ার কৃষক আরিজুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘অতি বৃষ্টিতে যা ক্ষতি হল, তা সামাল দেব কী ভাবে জানি না। প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ হয় আমাদের। কোথাও বাঁধাকপি, কোথাও ফুলকপি, বেগুন, সিম। সব জলের তলায়।’’ মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেছিলেন আরিজুল। বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন তিনি। লাভ তো দূরঅস্ত, কী ভাবে ধারের টাকা মেটাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না আরিজুল। শুধু আরিজুল নয়, এমন অবস্থা গ্রামের অনেক কৃষকেরই।


পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিও প্রায় একই রকম। গত মাসেই ডিভিসি জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এই জেলায়। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আবার বৃষ্টি। বাংলা-ওড়িশার সীমানা লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন এলাকার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি চিন্তা ধানচাষ নিয়ে। কৃষকদের কথায়, ‘‘এই বৃষ্টিতে আমন ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হল। বিঘা বিঘা জমিতে ধানগাছ শুয়ে পড়েছে।’’


পুজোর আগে বন্যায় হুগলির আরামবাগ মহকুমায় বেশির ভাগ ধান জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব্জিখেতও ছিল জলের নীচে। সেই ক্ষতি সামলে উঠতে না উঠতেই আবার বৃষ্টিতে চাপে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। রাত থেকে চলা বৃষ্টিতে ধান এবং সব্জির জমিতে জল জমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জমিতে ফলন্ত ধানগাছ শুয়ে পড়েছে। যে ধানে পাক ধরেছে, সেই ধান জলে ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা। জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মারদানা জানিয়েছেন, হুগলি জেলায় চলতি বছর খারিফ মরসুমে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে।

দুর্যোগের আবহে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলিতে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঘরছাড়া বাসিন্দারা। হুগলির পান্ডুয়াতেও একই চিত্র। সেখানকারও বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। পান্ডুয়ার বিডিও শ্রাবন্তী বিশ্বাস জানান, কয়েকটি ঘটনার খবর পেয়েছি। লোক পাঠিয়ে বিষয়টা দেখা হচ্ছে।

শুধু ফসল নয়, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ফুল এবং মাছ চাষও। পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানচাষ হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সেই ধানচাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি, বিভিন্ন ফুলচাষও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ জানতে যাচাই করতে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে আগেভাগে অনেক কৃষকই ফসল কেটে নিয়েছিলেন। তাতে কিছুটা ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
June 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30