হারানো প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে হুগলীতে গড়ে উঠেছে অভিনব ‘দত্তক বাগান’

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ হুগলীঃ হারানো প্রিয়জনের নাম গাছেদের গায়ে। হুগলির বৈঁচিগ্রামে DVC ব্রিজের নীচে প্রায় আট কাঠা জমির উপরে গড়ে উঠেছে এমনই অভিনব ‘দত্তক বাগান’। গাছগুলি সবে বসানো হচ্ছে। লক্ষ্য একটাই, এই গাছই একদিন বৃক্ষ হবে, ফুল, ফল দেবে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করবে, অক্সিজেন বিলিয়ে টেনে নেবে বিষ-দূষণ। বৈঁচিগ্রামেরই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই বাগান তৈরি করছে। এগিয়ে এসেছেন আমেরিকা কিংবা গ্লাসগোয় থাকা প্রবাসী বাঙালিরা।

যে সবুজে লুকিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার চাবিকাঠি, সেই গাছই এখন অমিল হয়ে পড়ছে। সবুজের ফিকে রং। বৈঁচিগ্রামের এই এলাকায় এক সময়ে প্রচুর গাছ ছিল। ধীরে ধীরে সে সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হারানো সবুজকে ফেরাতে এবং সবুজায়নের বার্তা দিয়ে গাছ বাঁচাতে বৈঁচিগ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই ‘দত্তক বাগান’। DVC-এর ক্যানাল পাড়ে চার মাস আগে গড়ে উঠেছে এই দত্তক বাগান। যে বাগানের প্রতিটি গাছের গায়ে ঝুলছে হারানো প্রিয়জনদের নাম। মানুষগুলো এখন আর নেই। তবে না থেকেও ভীষণ ভাবে থেকে গিয়েছে পরিবার পরিজনের সঙ্গে।

‘দত্তক বাগান’-এ আম, কাঁঠাল, জামরুল, আমলকি-সহ মোট ৪৪ প্রজাতির গাছ রয়েছে। বেশির ভাগই আমগাছ। উদ্যোক্তারা জানান, ‘দত্তক বাগান’ একটি অভিনব বাগান। প্রিয়জন মারা গেল, তাঁকে তো ফিরে পাওয়া যায় না। মা, বাবা, দাদু, ঠাকমা, যে-ই হোন না কেন। তাঁদের নামেই এই বাগান। ইতিমধ্যেই গ্রামবাসীরা যেমন বৃক্ষরোপণে এগিয়ে এসেছেন, বিদেশে থাকেন, এমন অনেকেই প্রিয়জনদের স্মৃতিতে গাছ লাগিয়েছেন। গাছ বেঁচে থাকবে প্রিয়জনের স্মৃতির মধ্যে দিয়ে।


উদ্যোক্তারা জানান, ঠিক যে ভাবে বাবা, মায়ের আশ্রয়ে সন্তান বেড়ে ওঠে। এই গাছগুলিও সেই বাবা, মায়ের মতোই আশ্রয় দেবে। যত বড় হবে, শান্তির শীতল হাওয়া দেবে। গ্লাসগোয় থাকেন প্রবাসী ভারতীয় মহুয়া দত্ত। তিনি বলেন, সমাজমাধ্যমে এই উদ্যোগের কথা জানতে পারি। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের এই উদ্যোগ আমার ভালো লেগেছে। আমি আমার ঠাকুমা, বাবা, কাকার স্মৃতিতে তিনটি চারাগাছ রোপণ করি।’

ভার্জিনিয়ায় থাকেন সঞ্চিতা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘বৈঁচিগ্রাম আমার বাবার বাড়ি। যেখানে জেঠু, কাকা, সকলে থাকেন। এই গ্রামে আমার যাতায়াত রয়েছে। এই সংস্থা বেশ ভালো কাজ করে। এই গাছ বাগান আমাকে খুবই উৎসাহী করেছে। আমি আমেরিকা থেকে এই সংস্থার কাছে কিছু অর্থ পাঠিয়েছিলাম। ওরা গাছ কিনে নিয়েছিল। আমার মা, জেঠিমা, কাকিমা, ঠাকুমা, দাদু, দিদার নামে গাছ লাগিয়েছি। আমি চাই তারা আরও ভালো কাজ করুক।’


সংস্থার সম্পাদক প্রীতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘চন্দননগরে গাছের গায়ে QR কোড বসানো হয়েছে। স্ক্যান করলেই তার নাম জানা যাবে। আমরা এখানে প্রিয়জনের স্মৃতিতে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী দিনে গাছ বড় হলে, এই নামেই বসানো হবে নেমপ্লেট।’

বাঁটিকা বৈঁচি গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান মালা বেগম বলেন, খুবই ভালো উদ্যোগ। পঞ্চায়েতের তরফেও বৃক্ষরোপণ করা হয়। এ রকম উদ্যোগে সব সময় পঞ্চায়েত পাশে আছে। গাছের যে প্রাণ আছে, সে তো এক বাঙালি কবেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। এ বার সেই গাছে নতুন ভাবে প্রাণের স্পন্দন। প্রিয়জনের সেই স্পন্দন অনুভব করবে আকাশ-বাতাস, প্রকৃতি— ‘কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি।’


DISCLAIMER: This channel does not promote any violent, Harmful or illegal activities. All content provided by this channel is meant for an educational purpose only.

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031