নিজস্ব সংবাদদাতাঃ মালদাঃ মাথার উপর টিনের চালা দিয়ে ভিতরে আসা রোদ-আঁধারে দিন-রাতের ঠাহর হয়। চারপাশের ছেঁড়া পলিথিন পেরিয়ে ভিতরে ঢোকা জল-বাতাস ঋতুর সময়কাল জানান দিয়ে যায়।
জানুয়ারীর প্রথমে আকাশে আঁধার ঘনালেও গা হিম করা বাতাস বইছে। তাই আচ্ছাদনের ভিতরে থাকা শরীরগুলো রাতভর কুঁচকে থাকে। তাই সকালে গৃহকর্তা সব কাজকর্ম ছেড়ে পলিথিনের ফুটোগুলোয় টেপ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন।
টেপ লাগিয়ে কি ঠাণ্ডা আটকানো যাবে? প্রশ্ন করতেই ওপার থেকে উত্তর আসে যে, ‘‘মাথা গোঁজার ঘরই নেই তো ঘরকন্না! নতুন পলিথিন কেনার টাকা কোথায় পাব? দাঁড়ান দাদা, রোদ থাকতে থাকতে ফুটোগুলো বন্ধ করি’’।
সরকারী প্রকল্পের ঘোষণায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ওয়াল ভরেছে। ভোটপাখিদের ঠোঁটে সেসব কথাই কিচিরমিচির করে। পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় প্রকল্পের মাইক ঘোষণায় আকাশ ফাটে। কিন্তু মালদার চাঁচল এক নম্বর ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সুনীল বসাকের কপাল ফাটে না।
সারাদিন সুনীলবাবু দিনমজুরি করে নিজের উপার্জনের টাকায় স্ত্রী সুধা ও ছেলে স্বাগতর পেটে কিছু দানা ঢোকাতে পারলেও মাথা গোঁজার ভালো ঠাঁই দিতে পারেননি। এখন যেখানে দিন-রাত কাটাচ্ছেন এর থেকে অনেক গৃহস্থের গোয়াল ঢের ভালো।
ভাঙা আস্তানায় ভাঙা মনে সুনীলবাবু জানালেন, ‘‘দিনমজুরি করে কোনো মতে তিনটে পেট চালাই। কিন্তু এই বাজারে এই উপার্জনের টাকায় ঘর করার কল্পনা স্বপ্নেও আসে না। সরকারী ঘরের কথা শুনেছি বটে, কপালে জোটেনি। ওই ঘর কি করলে পাওয়া যায়, তার সঠিক পথও জানা নেই’’।
সুনীলবাবুর দুর্দশার কথা জানা থাকলেও সরকারী ঘর অথবা অন্য কোনো প্রকল্পের সুবিধা কীভাবে পাবেন তা প্রতিবেশীদেরও কারোর জানা নেই।