অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধীতা করে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো ট্রেন

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিহারঃ ব্রিটিশ জমানায় গঠিত বিহার রেজিমেন্টের এই আদর্শকেই পণ করে বিহারের যুবকেরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। অগ্নিপথ প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের প্রতিবাদে রাজ্যের নানা প্রান্তে প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

ক্রমশ যা হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরোধীতা করে বিহারের গয়া, পাটনা, মুজফফ্‌রপুর সহ নানা জায়গায় চাকরীপ্রার্থীরা রেললাইন অবরোধ করেন।


আর আজ আরা, ছপরা,বক্সার, মুঙ্গের, নওয়াদা, বেগুসরাই, জেহানাবাদের মতো এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে শ্লোগানও উঠেছে। রেলের পাশাপাশি জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। টায়ার জ্বালানো, পাথর ছোঁড়াছুড়ি, গাড়ি ও ট্রেন ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছে।


এমনকি ট্রেনলাইনের উপরে আগুন জ্বালানোর সাথে সাথে ছপরায় ট্রেনেও আগুন ধরানো হয়েছে। নীতীশ কুমার সরকারের পুলিশ বাধা দিতে গেলে ধুন্ধুমার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় লাঠি এবং কাঁদানে গ্যাসে কয়েক জন বিক্ষোভকারীর আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।


প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা করেন। ওই প্রকল্পে চার বছরের জন্য সাড়ে ১৭ বছর থেকে ২১ বছরের তরুণ-তরুণীরা মাসিক ৩০-৪৫ হাজার টাকার চুক্তির ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখায় (নৌ, স্থল ও বায়ুসেনা) যোগ দিতে পারবেন। তাদেরই ‘অগ্নিবীর’ বলা হবে।

চতুর্থ বছরের শেষে সেনায় শূন্যপদ ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সেই ব্যাচের সর্বাধিক ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাকিদের ১১ থেকে ১২ লক্ষ টাকা হাতে দিয়ে অবসরে পাঠানো হবে। এতে কোনো পেনশন থাকবে না।

১৮৪৬ সালে গঠিত শিখ রেজিমেন্টর সদর দপ্তর অবিভক্ত বিহারের রামগড়েই (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে) রয়েছে। ১৭৭৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জমানায় গঠিত দ্য গ্রেনেডিয়ার্সের সদর দপ্তর পাশের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুরে রয়েছে। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ওই রেজিমেন্টের সেনাদের বড়ো অংশই বিহারের বাসিন্দা।
এই পরিস্থিতিতে মগধভূমে কর্মসঙ্কোচনের আশঙ্কা ক্রমশ দানা বাঁধছে। আর সেই সাথেই বিক্ষোভ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। অভিযোগ উঠছে যে, দেশের যুবকদের চাকরীর সব থেকে বড়ো ভরসা ভারতীয় সেনা। চাকরীতে স্থায়িত্বের কারণে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা সেনার চাকরীকে বেছে নেন।
কিন্তু অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ‘অগ্নিবীর’দের ৭৫ শতাং‌শকেই চাকরী পাওয়ার চার বছরের মধ্যে অবসর নিতে হবে। এককালীন কিছু টাকা পাওয়া গেলেও পেনশনের ব্যবস্থা থাকবে না। সেক্ষেত্রে তাদের আবার নতুন করে চাকরীর সন্ধান করতে হবে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বেহাল রাজকোষের কারণের চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের পথে হাঁটছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে সেনার অন্দরে স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেবে বলেও প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
September 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930