ভারত-পাক যুদ্ধে নিধন প্রায় ৪০ জন সেনা, ক্ষতিগ্রস্ত বহু বিমানঘাঁটি

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ নয়া দিল্লিঃ পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর লক্ষ্য ছিল। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালানোর পরেই পাক সেনাঘাঁটিতে প্রত্যাঘাত করা হয়েছে। গতকাল এক ঘণ্টারও বেশী সময় ধরে ভারতীয় সেনার ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশন্‌স’ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাই, বায়ুসেনার ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ এয়ার অপারেশন্‌স’ এয়ার মার্শাল একে ভারতী এবং নৌসেনার ‘ডিরেক্টর জেনারেল অফ নেভাল অপারেশন্‌স’ ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ সাংবাদিক বৈঠকে গত কয়েক দিনের সামরিক অভিযানের তথ্য পেশ করেন।

তিন বাহিনীর কর্তারা জানান, এই সংঘাতের আবহে পাক সেনার ৩৫-৪০ জন জওয়ান নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেশ কিছু সামরিক ঘাঁটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি ইসলামাবাদের কাছে চাকলালা ঘাঁটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করাচিতেও যে কোনও মুহূর্তে আঘাত করার মতো কৌশলগত অবস্থানে ছিল ভারতীয় নৌসেনা। তিন বাহিনীর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, ৮-৯ মে’র রাতে পাকিস্তান বেশ কিছু ড্রোন এবং বিমান ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করে। সেগুলির লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সামরিক ঘাঁটি। তার মধ্যে বেশির ভাগই ব্যর্থ হয়েছে।


শ্রীনগর থেকে নালিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ড্রোন, পাইলটহীন বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা করে পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য সেগুলি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারেনি। এ ছাড়া পাকিস্তানি কিছু যুদ্ধবিমানকেও গুলি করে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তবে সেগুলি ভারতের সীমান্তে প্রবেশ করার আগেই সেগুলিকে আটকে দেওয়া গিয়েছে। ভারত স্পষ্ট করে দেয়, পাকিস্তানের এই হামলার কারণেই প্রত্যাঘাত করতে হয়েছে ভারতীয় সেনাকে।


তিন বাহিনীর যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, পাকিস্তানি সেনা বা সীমান্তের ও পারের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভারতের কোনও লড়াই নেই। ভারতের লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। যে জঙ্গিদের নিধনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাদের হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও পাকিস্তানের তরফে হামলা করা হয়েছে। সেই কারণেই ভারতকে জবাব দিতে হয়েছে। ওই হামলার পরে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটিকে লক্ষ্য করে প্রত্যাঘাত করে ভারতীয় সেনাও। তবে কোনও সাধারণ নাগরিকের যাতে প্রাণহানি না-ঘটে, সে দিকটিও নিশ্চিত করার চেষ্টা হয়। পাক হামলার পরে ভারতও পাকিস্তানের বেশ কিছু বায়ুসেনা ঘাঁটি, কমান্ড সেন্টার এবং অন্য সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত করে।


প্রত্যাঘাত করা হয় পাকিস্তানের ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাতেও। পাকিস্তানের যে সামরিক ঘাঁটিগুলিতে প্রত্যাঘাত করা হয়েছে, তার মধ্যে ইসলামাবাদ সংলগ্ন এলাকাও রয়েছে। এয়ার মার্শাল ভারতী বলেন, “আমরা যে ঘাঁটিগুলিকে নিশানা করেছিলাম তার মধ্যে ছিল চাকলালা, রফিকি। উল্লেখ্য, চাকলালা ইসলামাবাদে অবস্থিত।” এ ছাড়া পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান, সরগোদা, জাকোকাবাদ এবং ভুলারির মতো এলাকাতেও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা করা হয়েছে।

তিন বাহিনীর সাংবাদিক বৈঠকে জানানো হয়, এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, আগ্রাসী মনোভাবকে কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এয়ার মার্শাল জানান, এই ঘাঁটিগুলিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিল ভারতের। কিন্তু ভারত নিয়ন্ত্রিত এবং পরিমিত জবাব দিয়েছে। একই রকম ভাবে গত কয়েক দিন ধরে পাক নৌসেনাকে কৌশলগত ভাবে চাপে রেখেছিল ভারতীয় নৌসেনাও। ভাইস অ্যাডমিরাল এএন প্রমোদ জানান, পহেলগাঁও কাণ্ডের পরে নৌসেনার ডুবোজাহাজ, বিমান-সহ সমস্ত বিভাগকে সংঘাতের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সমুদ্রে মোতায়েন করে দেওয়া হয়েছিল।

সন্ত্রাসবাদী হামলার ৯৬ ঘণ্টার মধ্যে নৌসেনা আরব সাগরে বেশ কিছু কৌশলগত অবস্থান নেয়। উত্তর আরব সাগরে এমন জায়গায় বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল যেখান থেকে নিজেদের পছন্দ মতো সময়ে করাচি-সহ বিভিন্ন স্থানে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা ছিল নৌসেনার। ভারতীয় নৌসেনার কৌশলগত অবস্থানের জন্য পাকিস্তানি নৌসেনাকে রক্ষণমূলক অবস্থান নিতে হয়েছিল এবং সেগুলি বেশির ভাগই নিজেদের বন্দর বা উপকূলের কাছাকাছি রয়ে গিয়েছিল।

ভারত জানিয়েছে, ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিকল্পনার মূল সামরিক লক্ষ্যই ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত অপরাধী এবং পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দেওয়া এবং জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ঘাই জানান, ন’টি জঙ্গিঘাঁটিতে হামলায় ১০০-র বেশি জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ইউসূফ আজ়হার, আব্দুল মালিক রাউফ এবং মুদস্‌সর আহমেদ। নিহত জঙ্গিদের মধ্যে আইসি ৮১৪ অপহরণ এবং পুলওয়ামা হামলায় জড়িত জঙ্গিও রয়েছে। এই জঙ্গিনিধন অভিযানের সময় যাতে কোনও সাধারণ মানুষের মৃত্যু না-হয়, তার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী।

বস্তুত, গত কয়েক দিনের এই সংঘাতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীরও পাঁচ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন সেনাকর্তারা। সাংবাদিক বৈঠকের শেষ পর্বে ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও রাফাল যুদ্ধবিমানের ক্ষতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। ওই প্রশ্নের জবাবে এয়ার মার্শাল ভারতী সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি জানান, একটি সংঘর্ষের পরিস্থিতি এবং রাফালও সেটির অঙ্গ।

তবে এই অভিযানে জঙ্গিঘাঁটিগুলি ধ্বংস করা বাহিনীর লক্ষ্য ছিল এবং সেই লক্ষ্যে সাফল্য এসেছে। এর ফল গোটা বিশ্ব দেখতে পাবে। রাফাল নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য না-করার কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি। বর্তমান সংঘর্ষের পরিস্থিতিতে এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করলে শত্রুপক্ষের সুবিধা হতে পারে। তাই এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না তিনি। যদিও এই সংঘাতের আবহে ভারতীয় বায়ুসেনার সকল পাইলট নিরাপদ রয়েছেন, তা স্পষ্ট করেছেন এয়ার মার্শাল।

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031