অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ দীর্ঘদিন থেকে দেশের অন্যতম ব্যস্ততম স্টেশন শিয়ালদহ থেকে দেশের প্রথম সেমি বুলেট ট্রেন চালু করার দাবী উঠেছিল। অবশেষে ওই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হাওড়ার পরে এবার শিয়ালদহ থেকে বিহার অবধি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলতে শুরু করবে। পূর্ব মধ্য রেলওয়ে সহরসা ও শিয়ালদহের মধ্যে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলবে। অর্থাৎ সহরসা থেকে শিয়ালদহ ভায়া ঝাঝা এবং কিউল হয়ে চলবে। ইতিমধ্যে রেলের তরফে নোটিফিকেশনও জারি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই রুটে ট্রায়াল রান শুরু হয়ে যাবে।
গত দুমাস ধরে এই রুটে পাইলটদের ট্রেনিং দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলবে। রেল শিয়ালদহ-বিহার বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালানোর আগে যাত্রী নিরাপত্তার সুরক্ষিত করার কাজে অতিরিক্ত জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে সিগন্যাল প্যানেল সহ বেশ কয়েকটি দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। মাস তিনেকের মধ্যে কাজ চালানোর উপযোগী পরিকাঠামো তৈরী হয়ে গেলে শিয়ালদহ থেকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ছুটবে। ফলে শিয়ালদহ রুটে এই বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হলে বাংলা ও বিহারের মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে।
পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার মিলিন্দ দেউস্কর জানান, “এই জন্য কলকাতা টার্মিনাল লাগোয়া কাশীপুরে একটি আধুনিক কোচিং ডিপো তৈরী করা হবে। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খরচ করে যাবতীয় আধুনিক সুবিধা সহ ওই কোচিং ডিপো বা ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। হাওড়ার ঝিল সাইডিংয়ের ধাঁচে ভবিষ্যতের জন্য ওই পরিকাঠামো গড়ে তোলার পাশাপাশি কলকাতা এবং শিয়ালদহ স্টেশনের ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণ পরিকাঠামোও উন্নত করা হচ্ছে। দু’জায়গাতেই সর্বাধিক চব্বিশ কোচের ট্রেনের রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে সম্প্রতি পিট লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে।
পাশাপাশি পুরোনো সেতুর সংস্কার করে ট্রেনের গতি বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে পূর্ব রেলের আওতায় চলা বেশীরভাগ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে চলে। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে ব্যান্ডেল স্টেশনকে কলকাতার উপগ্রহ টার্মিনাল হিসাবে গড়ে তোলা হতে পারে। সে জন্য প্রায় তিনশো কোটি টাকার পরিকল্পনা তৈরী করা হয়েছে। হাওড়া স্টেশনে পুরোনো বাঙালবাবু ব্রিজ ও বারাণসী ব্রিজের বদলে নতুন সেতু চালু হলে ওই স্টেশনে আটটি প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য বাড়ানো সম্ভব হবে। আর তা হলে দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়াও বারো কোচের লোকাল ট্রেন স্টেশনে ঢোকা নিয়ে জটিলতা কমবে।
আগামী তিন মাসের মধ্যে হাওড়া-নয়াদিল্লি পথের একাংশে কবচ প্রযুক্তির মহড়া শুরু হতে পারে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পূর্ব রেল পণ্য পরিবহণ খাতে ২৮ শতাংশ আয় বাড়িয়েছে। লোকাল ট্রেনের সময়ানুবর্তিতা উন্নত করতে দু’শোটি ট্রেনকে বেছে নিয়ে পরিস্থিতি বদলানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রেললাইনের উপরে উড়ালপুল নির্মাণ নিয়েও একাধিক ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থেকে গিয়েছে। জমি সমস্যা মিটিয়ে ওই সব প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। অগ্নিকাণ্ড ছাড়াও রেললাইনের অন্যান্য ক্ষতি এড়াতে রেলপথের ধারে আবর্জনা ফেলার বিরুদ্ধে রেল প্রচার চালাবে।