প্রচারে বেরিয়ে বধূকে হেনস্থার অভিযোগ বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে
দীপঙ্কর গোস্বামীঃ মালদাঃ প্রচারে বেরিয়ে বাথরুম করার নামে বাড়িতে ঢুকে বধূকে একা পেয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠল হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করায় স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য ও তার ভাইপোকে বিজেপি প্রার্থীর দেহরক্ষীরা মারধর করেন বলেও অভিযোগ। যদিও প্রচারে বেরিয়ে তৃণমূল তাকেই হেনস্থা করেছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমান।
শুক্রবার রাতে ঘটনাটি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার খাড়াগ্রাম এলাকায় ঘটেছে। রাতে দু’পক্ষই হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। খবর পেয়ে রাতেই হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে যান। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমান খাড়াগ্রাম এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন। ওই সময় মতিবুর একটি বাড়িতে বাথরুম করতে ঢোকেন। বাথরুমটি বাড়ির পিছনের দিকে ছিল। আর ওই বধূ বাড়িতে একাই ছিলেন। এরপর তিনি বাথরুম থেকে বেরিয়ে বধূর ঘরে ঢোকেন।
অভিযোগ, তাকে ভোট দেওয়ার জন্য বধূর পরিবারকে মোটা টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। কিন্তু মহিলা সাফ জানিয়ে দেন যে, তার কাকাশ্বশুর তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। তারা সকলেই তৃণমূল করেন। ফলে অন্য কোনো দলকে ভোট দিতে পারবেন না। এরপরেই মতিবুর বধূর শরীরে হাত দিয়ে জোরাজুরি শুরু করেন। এমনকি তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ করেছেন ওই বধূ।
খবর পেয়েই স্থানীয় মালিওর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মহম্মদ আলাউদ্দিন ছুটে আসেন। তিনি প্রতিবাদ করলে তাকে এবং তার ভাইপোকে প্রার্থীর দেহরক্ষীরা মারধর করেন। টেনে-হিঁচড়ে তার পোশাক ছিঁড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেখান থেকে প্রার্থীকে কোনো রকমে নিয়ে ফিরে যান দেহরক্ষীরা।
ঘটনার আকস্মিকতায় বিব্রত বধূ বলেছেন, “উনি বাথরুম করার কথা বললে তাকে বাথরুম দেখিয়ে দিই। ফিরে এসে বললেন, তাকে ভোট দিতে হবে। তবে আমরা টিএমসি করি বলায় আমাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। আমি কোনোমতেই রাজি না হওয়ায় আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ শুরু করেন ওই বিজেপি প্রার্থী”।
তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বিজেপি প্রার্থী মতিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কিন্তু বিজেপির হরিশ্চন্দ্রপুরের অবজার্ভার অনিরুদ্ধ সাহার অভিযোগ, “প্রচারের সময় তৃণমূলই প্রার্থীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করে। টানাহ্যাঁচড়া করে তার পোশাক ছিঁড়ে দেয়। আমরা কোনো গন্ডগোল না করে ফিরে আসি। ওই পরিবার মতিবুরের আত্মীয় বলেই বাথরুম করতে গিয়েছিল। এরপরেও প্রার্থীকে পরিকল্পনা করেই হেনস্থা করা হয়”।
যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় তৃণমূল সদস্য মহম্মদ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, “আমি বাড়িতে ছিলাম না। এসে সব শুনে প্রতিবাদ করি। যে কেউ এলাকায় প্রচার করতেই পারেন। তবে কারোর বাড়িতে ঢুকবেন কেন? বিজেপি প্রার্থী বাথরুমের নাম করে বধূর শরীরে হাত দেয়। পরে সেটি জানার পর প্রতিবাদ করতেই আমাকে তার দেহরক্ষীরা মারধর করে পোশাক ছিঁড়ে দেয়”।
প্রার্থীকে পাল্টা মারধরের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, “বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে সাত থেকে আটজন দেহরক্ষী নিয়ে ঘোরেন। সাধারণ মানুষ তার কাছে পৌঁছাতেই পারেন না। যার ফলে তাকে মারধরের মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণ ঢাকতে নিজেরাই পোশাক ছিঁড়ে মারধরের মিথ্যে নাটক করছে বিজেপি”।