ঋণ শোধের চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হলেন ১ দম্পতি

Share

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বর্ধমানঃ গতকাল বর্ধমান দুই নম্বর ব্লকের বড়শুলের গোপালপুর গ্রামে মাটির ঘরের কাঠামো থেকে উদ্ধার এক প্রৌঢ় দম্পতির ঝুলন্ত দেহ। মৃত দম্পতি ৫৩ বছর বয়সী রেখা মালিক ও ৫৬ বছর হেমন্ত মালিক। পেশায় দিনমজুরী করতেন। এই ঘটনায় এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেখা দেবী এবং হেমন্তবাবুর দুই ছেলে সনাতন ও রমেশ। বড়ো ছেলে সনাতন আলাদা থাকতেন। আর ছোটো ছেলে রমেশ মা-বাবার কাছে থাকতেন। ছোটো ছেলে রমেশের কাছে। রমেশই বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে মা এবং স্ত্রীর নামে মহিলা উন্নয়নের কারণ দেখিয়ে একাধিক ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঋণ শোধের চাপ এড়াতে মাসখানেক আগে রমেশ স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান।


আর রেখা দেবীর নামে ঋণ নেওয়ায় গত তিন সপ্তাহ ধরে ওই সংস্থা রেখা দেবীকে ঋণ শোধ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। ফলে রেখা দেবী স্বামীকে নিয়ে জামালপুরের জামুদহে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে সেখানেও সংস্থার লোকেরা পৌঁছে যাওয়ায় নিজের বাড়িতে চলে আসেন। এরপর বুধবার সকালবেলা ৮টা ৩০ মিনিট থেকে দুপুরবেলা ১টা ৩০ মিনিট অবধি সংস্থার লোকেরা বাড়িতে বসে থাকায় রেখা দেবী ও হেমন্তবাবু ভয়ে লুকিয়ে ছিল। এরপর এই ঋণ শোধ করার চাপ সহ্য করতে না পেরে গলায় গামছা জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন।


এদিন সকালবেলা সনাতনই বাবাকে ডাকতে গিয়ে দেখে, ঘরের ভিতরে দু’টি গামছায় পাশাপাশি দু’জনের ঝুলন্ত দেহ। পুলিশ মৃতদেহ দু’টি উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। এদিকে জানা যাচ্ছে যে, বর্ধমান দুই নম্বর ব্লক জুড়েই ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থার রমরমা চলছে। বিভিন্ন গ্রামে অফিসও রয়েছে। বড়শুলে থাকা এই ধরণের তিনটি সংস্থার দাবী, রেখা দেবী এবং হেমন্তবাবুর নামে কোনো ঋণ নেওয়ার নথি নেই। আর ঋণ শোধের জন্য অযাচিত চাপ দেওয়াও হয় না।


জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, ‘‘পুলিশকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করানো হবে।’’ পুলিশ এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছেন। বিডিও সুবর্ণা মজুমদার বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা কম সুদে ঋণ পান। ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। এই বিষয় নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হবে।’’

স্থানীয় সিপিএমের কল্যাণ হাজরার বলেছেন, ‘‘মানুষের হাতে কাজ নেই। তাই মানুষ ক্ষুদ্র ঋণদান সংস্থার জালে জড়িয়ে পড়ছেন।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রমেশচন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্য সরকার নানা সুবিধা দিচ্ছে। তারপরেও নানা ইচ্ছা পূরণের জন্য আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঋণ নিয়ে এই সব সংস্থার খপ্পরে পড়ছেন।’’

DISCLAIMER: This channel does not promote any violent, Harmful or illegal activities. All content provided by this channel is meant for an educational purpose only.

Share this article

Facebook
Twitter X
WhatsApp
Telegram
 
December 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031