অনুপ চট্টোপাধ্যায়ঃ কলকাতাঃ গতকাল ২০ ঘণ্টার বেশী সময় ধরে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতেরবেলা রেশন বণ্টন মামলায় ইডির (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) হাতে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দপ্তরেও নিয়ে আসা হয়েছে। এই প্রথম রেশন বন্টন মামলায় কোনো মন্ত্রী গ্রেফতার হলেন।
ইডি সূত্রে খবর, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়ি থেকে রেশন বণ্টন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র মিলেছে। এদিন তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, “গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হলাম। শুধু এটুকুই বলে গেলাম। ভারতীয় জনতা পার্টি খুব ভালো কাজ করেছে। তারা আমাকে শিকার করলেন।”
প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারীর পরেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম উঠে এসেছে। গতকাল ভোরবেলা সাড়ে ৬টা নাগাদ ইডি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সল্টলেকের বিসি ব্লকের দু’টি বাড়িতে (বিসি ২৪৪ এবং বিসি ২৪৫) তল্লাশি চালান। এই তল্লাশি চলাকালীন বহু মানুষ বাইরে ভিড় করলে ইডি আধিকারিকেরা তাদের সরাতে থানায় যোগাযোগ করলে থানা থেকে পুলিশ কর্মীরা বাইরে ব্যারিকেড বসান। এছাড়া পৈতৃক বাড়ি বেনিয়াটোলা লেনের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়।
গতকাল দুপুরবেলা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেন, ‘‘আমি শুনেছি, ইডির গোয়েন্দারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে চিনির কৌটো উল্টে দেয়। ঘিয়ের শিশি উল্টে দেয়। বাড়ির মেয়েদের কত রকম পোশাক-আশাক থাকে, তাদের ক’টা শাড়ি আছে, তারক তল্লাশি নেয়। এই সব আমরা সহ্য করব না। বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ডাক নাম) সুগারের রোগী। ওর যদি কিছু হয়, তাহলে আমি বিজেপি ও ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর করব।’’
এদিকে যখন তল্লাশি চলছে, তখনই বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তুলসী সিংহ রায় এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি রঞ্জন পোদ্দার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে বিজয়া করতে মিষ্টি নিয়ে পৌঁছালে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা আটকে দেন। তুলসী সিংহের এই ঘটনায় অভিযোগ, “আমাদের ঐতিহ্য মেনেই গুরুজনের সঙ্গে বিজয়া করতে এসেছিলাম। কিন্তু এরা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে আঘাত হানছে।”
অন্যদিকে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়ির পাশাপাশি ওই সময় ইডি আধিকারিকরা তাঁর আপ্তসহায়ক অমিত দের নাগেরবাজারের ভগবতী পার্ক এলাকায় ও স্বামী বিবেকানন্দ রোডে থাকা দু’টি ফ্ল্যাটে গেলে দু’টি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ অবস্থায় পান। আর অমিতকে বাড়িতে না পেয়ে তার বন্ধু রনির বাড়িতেও খোঁজ শুরু করেন। তবে বিকেলবেলা অমিত সপরিবারে বাড়ি ফিরে আসেন।